১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন

 

পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ৬ দফা আন্দোলন ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে ৬ দফার কর্মসূচি ঘোষণার চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন।

১৯৬৬-সালের-ছয়-দফা-আন্দোলন
এক সাংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি পরবর্তীতে ঘোষণা দেওয়া হয়। অধিবেশনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৭৪০ জন রাজনীতিবিদ অংশগ্রহণ করেন।এ ঘোষণা ছিল স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের পূর্ববর্তী আঠারো বছর সংগ্রামের পটভূমিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর অধীনে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ দাবী।

পেজ সূচিপত্রঃ ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন

১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন

ছয় দফার কাঠামো গঠন সাধারণত শুরু হয় ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং সামরিক ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানকে চরম অবহেলার ফলে বাংলা স্বায়ত্তশাসনের দাবি কে আরো তীব্র করে তোলার মাধ্যমে। শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা প্রস্তাব টি করেন

পাক ভারত যুদ্ধের অবসানে সম্পাদিত তাসখ খণ্ড চুক্তির ঘোষণার পর যখন পাকিস্তানের শাসকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয তখন।ছয় দফা কর্মসূচি প্রচারিত হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ব্যাপকভাবে এ কর্মসূচিকে সমর্থন করেন। কেননা এই কর্মসূচিতে উত্থাপিত বিষয়গুলো ছিল বাংলার মানুষের প্রাণের দাবি।

ছয় দফা আন্দোলনের রাজনৈতিক পটভূমি

ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু তারপরেও পূর্ব পাকিস্তানকে কখনোই লাহোর প্রস্তাবভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন অধিকার দেওয়া হয় না। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আইনে বলা হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হভে ও গণমূখী সংবিধান প্রণয়ন করা হবে। কিন্তু এরপরেও পাকিস্তানের প্রথম সরকার গঠন ও সংবিধান প্রণয়ন করতে

১৯৬৬-সালের-ছয়-দফা-আন্দোলন
এক দশক অতিবাহিত হয়ে যায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়। কিন্তু এরপরেও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তে যুক্তফ্রন্টকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয় না।১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে এবং যার ফলে পুরো পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ দের মৌলিক অধিকার হরণ করে নেন। এবং ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র নামক অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেন।

এবং এদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে ১৯৬০ ও ১৯৬৫ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসন করেন। এভাবে ১৯৪৭ সালের পর থেকে ১৯৬৬ সাল তথা স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানে কোন জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জন প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের ওপর সকল পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া হতো।

১৯৬৫ সালে শুরু হয় পাক ভারত যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সামরিক দিক থেকে পূর্বাঞ্চল একেবারে অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এরকম জরুরি অবস্থায় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তানের কোন কর্তৃপক্ষের ছিল না। এরই প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন অধিকার দাবি করেন।

ছয় দফা আন্দোলনের প্রশাসনিক পটভূমি

তৎকালীন পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থায় দেশের প্রথম শ্রেণীর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পর্যন্ত সকল স্তরে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানীদের অংশগ্রহণ ছিল নিতান্তই নগণ্য সংখ্যক। পশ্চিম পাকিস্তানের পরিকল্পনায় প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের নিয়োগ নগণ্য করা হয়। সে সময়ে মোট ৬২ জন মন্ত্রির মধ্যে ২২ জন ছিলেন বাঙালি। 

আরও পড়ুনঃ ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম ও ফ্রিজের যত্ন

আবার এই ২২ জনের মধ্যে কাউকে কোন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় এর দায়িত্ব দেওয়া হয় না। এই সমস্ত কারণে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে যেকোনো পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের ভূমিকা থাকত না। যার ফলস্বরূপ ৬ দফায় স্বায়ত্তশাসন অধিকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের সীমিত ক্ষমতা এবং আঞ্চলিক সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি উত্থাপিত হয়।

ছয় দফা আন্দোলনের অর্থনৈতিক পটভূমি

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের উৎপত্তির পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে শোষিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। তৎকালীন সময়ে ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হেড অফিস পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থান করত। যার ফলস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত। চাকরি ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ছিলেন সংখ্যাধিক্য। যার কারনে এই আয়গুলো ভোগ তারাই করতেন। ১৯৬৬ সালে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় রাজস্ব আয় ও ব্যয় দুই প্রদেশের অবদান নিয়ে একটি সমীক্ষা তৈরি হয়।

এই সমীক্ষায় দেখা যায় কেন্দ্রীয় রাজস্ব আয়ের পূর্ব পাকিস্তানের অবদান ২২ শতাংশ এবং চলতি ব্যয় পুরো পাকিস্তানকে দেওয়া হয় ১২ শতাংশ। এটি দেখানো হলেও এ হিসাবটি ও যথার্থ হয় না। কেননা পূর্ব পাকিস্তানের আমদানি ও আয়কর শুল্ক পশ্চিম পাকিস্তানের জমা দিতে হতো। এর পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মোট আয়ের ৬০ শতাংশ আসে পূর্ব পাকিস্তান থেকে। কিন্তু আয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের অবদান বেশি হলেও ভোগ ও উন্নয়ন ব্যয়ে এ অঞ্চলের লোকজন তাদের ন্যায্য অংশ পেত না।

তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের মাথাপিছু ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৮০ টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ২০৫ টাকা। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পূর্বাঞ্চলে মাথাপিছু ব্যয় হয়েছিল ১৯০ টাকা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ২৯২ টাকা। ১৯৬০ থেকে ৬১ এবং ১৯৬৪ থেকে ৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যয় হয়েছিল ৯৭০ কোটি টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের ২১৫০ কোটি টাকা ।

কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রেজারিতে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তান ২০০ কোটি টাকা বেশি মুদ্রা জমা দেয়। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার এই সময় প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার বৈদেশিক দ্রব্য আমদানি ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে। এমন বৈষম্যমূলক নীতি ও শোষণের প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা উত্থাপন করেন।

ছয় দফা আন্দোলনের সামরিক পটভূমি

১৯৪৭ সালের স্বাধীন হওয়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের সামরিক, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। প্রশাসনিক ব্যবস্থার মতো সামরিক ব্যবস্থাতে ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অংশগ্রহণ ছিল স্বল্পসংখ্যক। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হয় এবং সেই যুদ্ধে পুরো পাকিস্তান সামরিকভাবে অরক্ষিত ছিল।

আরও পড়ুনঃ ইউরিনে ইনফেকশন এর কারন ও করণীয়

পূর্ব পাকিস্তানের ওপর সম্ভাব্য ভারত আক্রমণ প্রতিহত করার মত কোন শক্তি পূর্ব পাকিস্তানের ছিলনা। এমতো রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার ও সাহিত্য শাসনের দাবি ও সম্মিলিত ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি প্রণয়ন করেন।

১৯৬৬ সালের ৬ দফার ধারা

১৯৬৬ সালের আন্দোলনের ধারা বা দফা ছিল ছয়টি। এ ছয়টি ধারা বা দফা উল্লেখ করা হলো।

  • শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি
  • কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা 
  • মুদ্রা ও অর্থ ব্যবস্থা
  • রাজস্ব, কর ও শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা
  • বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্য
  • প্রতিরক্ষা
১৯৬৬ সালের ১৩ই মার্চ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয় দফা কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়। কাউন্সিল অধিবেশন করা হয় ১৮,১৯ মার্চ এবং এ সভায় ছয় দফা কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়।

ছয় দফার সরকারি প্রতিক্রিয়া

তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ছয় দফার প্রতি প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক ও কঠোর।ছয় দফা উত্থাপিত হওয়ার পর দিনই পাকিস্তানের পত্র-পত্রিকায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দেওয়া হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আইন ও সংসদীয় মন্ত্রী আব্দুল হাই চৌধুরী ১৯৬৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছয় দফা কে রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা বলে আখ্যা দেন।

এর পাশাপাশি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ছয় দফাকে হিন্দু আধিপত্যাধীন যুক্তবাংলা গঠনের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেন। এর পাশাপাশি সমর্থকদের গোলযোগ সৃষ্টিকারী আখ্যা দিয়ে তাদের উচ্ছেদ কল্পে প্রয়োজনে অস্ত্রের ভাষা ব্যবহারের হুমকিও দেন।

১৯৬৬ সালের ১৫ মার্চ আইয়ুব খান বলেন পাকিস্তানকে ধ্বংস করার অজুহাতে ছয় দফা ঘোষণা করা হয়েছে। ছয় দফা আন্দোলন জোরদার হতে দেখে শেখ মুজিবুর রহমান ও বহু আন্দোলনকারী কে কারারুদ্ধ করা হয়।

ছয় দফায় রাজনৈতিক দল গুলোর প্রতিক্রিয়া

মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ঘোষণা করা হয় ছয় দফা পাকিস্তানকে বিভক্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কাউন্সিল মুসলিম লীগ একে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ধর্মভিত্তিক দল জামাতে ইসলামী ও নেজামী ইসলামী ছয় দফা প্রত্যাখ্যান করে। জামাত ইসলামী ছয় দফা কে বিচ্ছিন্নতার লক্ষ্যে পরিচালিত দাবি বলে আখ্যা দেয় এবং নিজামী ইসলামী এ প্রস্তাবকে একতরফা ও স্বৈরতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত করে।
১৯৬৬-সালের-ছয়-দফা-আন্দোলন
ধর্মভিত্তিক দলগুলো মন্তব্য করে যে ৬ দফা ইসলাম ধর্মের অস্তিত্ব বিপন্ন করবে। মাওলানা ভাসানী ছয় দফা কে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণ্য করে একে অর্থনৈতিকভাবে অসম্পূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। কোন কোন ন্যাপ নেতা একে সিআই এরপরিকল্পনা বলে আখ্যা দেন এবং ১৯৬৬ সালে পার্টির ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের ছয় দফা পাল্টা ১৪ দফা ভিত্তিক কর্মসূচি ঘোষণা করে। আয়ুবের চৈনিক নীতির কারণে ম্যাপ তাকে সমর্থন করায় স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে ভাষানী পশ্চাদপদ নীতি অনুসরণ করে।

এমনকি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও একটি অংশ এই কর্মসূচির সমালোচনা করে। বিশেষ করে দলের পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের মধ্যে নবাবজাদা নজরুল্লাহ খান এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন এবং তিনি ১৯৬৭ সালের পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন নামে একটি ফোরাম গঠন করেন ফলে ৬ দফা কে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানীরা কর্মসূচি সমর্থন ও পশ্চিম পাকিস্তানিরা বিরোধিতা করায় আওয়ামী লীগে অঞ্চল ভিত্তিক ভাঙ্গনের সূত্রপাত ঘটে।

ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্ব

ছয় দফা দাবি ছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক দীর্ঘকাল ধরে পূর্ব পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। প্রস্তাবের প্রণেতা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই এই ছয় দফা কে বাংলার কৃষক, মজুর, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত তথা আপামর জনসাধারণের মুক্তির সমাধিক এবং বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চিত পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
দাবি উত্থাপনকালে তিনি একে আমাদের বাঁচার দাবি ছয় দফা কর্মসূচি বলে উল্লেখ করেন। ছয় দফা দাবি ছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এবং এ কারণে এর প্রতি জনগণের সমর্থন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।এটি বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান ও বৌদ্ধদের সমন্বয়ে গঠিত বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্য প্রকাশের এবং আত্মনির্ভরশীলতার চাবিকাঠি। ছয় দফার পূর্বে বাংলার পক্ষ থেকে যেসব দাবি উত্থাপিত হয়েছিল সেগুলো ছিল মূলত পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাঙালির অধিকারের দাবি।

বস্তুত ৬ দফার মধ্য দিয়েই পূর্ব বাংলাকে একটি পৃথক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে অধিক স্বায়ত্তশাসন অধিকার দাবি করা হয়েছিল। ছয় দফা ছিল একনায়ক তান্ত্রিক স্বৈরশাসনাদিন পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রথম হাতিয়ার। ছয় দফা ভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন করে এবং পরবর্তীকালে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

মন্তব্যঃ ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন

ছয় দফা কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্রিজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। ৬ দফা দাবিতে পাকিস্তান হতে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন করার দাবি ছিল না। এতে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের ন্যায্য অধিকার আদায়ের মাধ্যমে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের অপব্যাখ্যা করে এবং বাঙ্গালীদের বিচ্ছিন্নতা বাদী বলে আখ্যা দেয়। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের চরম দূর দিন ঘনিয়া আসে।

শাসক গোষ্ঠী বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন নশ্চাত করতে তৎপর হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাঙালির সশাসনের বিষয়টি সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়। কিন্তু নির্বাচিত হয়েও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় হস্তান্তর না করাই শুরু হয় পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন যা সশস্ত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে বাঙালি লাভ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র। এভাবে ছয় দফা বাঙালি জাতিকে মুক্তির প্রেরণা দেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url