ইউরিনে ইনফেকশন এর কারন ও করণীয়
আমাদের মাঝে প্রায় ইউরনে ইনফেকশন বা প্রসাবে সংক্রমণ সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। ইউরনে ইনফেকশনের সমস্যাটি প্রাথমিকভাবে খুব গুরুতর না হলেও পরবর্তীতে এটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। কাজেই ইউরনে ইনফেকশন বা প্রসাবে সংক্রমণ কি কি কারনে হয়
এবং এটি হলে আমাদের কি কি করনীয় সে সম্পর্কে জেনে থাকা খুবই জরুরী। যদি কোন মানুষের ৬ মাসে দুইবারের বেশি বা বছরে তিনবারের বেশি ইউরেনে ইনফেকশন হয় তাহলে একে বলে এর রি কারেন্ট ইনফেকশন বা বারবার মূত্রনালীর সংক্রমণ। এবার জেনে নেওয়া যাক এ সম্পর্কে বিস্তারিত।
পেজ সূচিপত্রঃ ইউরিনে ইনফেকশন এর কারন ও করণীয়
ইউরিনে ইনফেকশন এর কারন ও করণীয়
ইউরিনে ইনফেকশন নানা কারণে হতে পারে। হতে পারে শারীরিক গঠনগত সমস্যার কারণে।
আবার এটি হতে পারে দীর্ঘক্ষন প্রসাব আটকে রাখার কারণে। মানুষের হরমোন জনিত
তারতম্যের কারণেও ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। অনেক সময় যৌন সম্পর্কের কারণে ইনফেকশন হয়।
আবার কেউ যদি অপরিচ্ছন্নতায় থাকে এবং যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করে তাহলে
ইউরিন ইনফেকশন দেখা দেয়। এরকম নানা রকম কারণে ইউরিনে ইনফেকশন হতে পারে। ইউরিনে
ইনফেকশন হলে আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে। এবং কিছু বর্জনীয় ব্যাপার ও রয়েছে। এ
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
শারীরিক গঠনগত সমস্যার কারণে
মেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য ছোট হওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া
সহজেই মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে। এটি একটি শারীরিক গঠনগত সমস্যা যার কারণে
ইউরিনে ইনফেকশন হয়। আবার যদি কোন ব্যক্তির কিডনি বা মূত্রনালী বা থলিতে পাথর
হয় তাহলেও ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।
জরায়ু বের হয়ে এসে মথুরা নিচে চাপ দেওয়া কে বলা হয় ইউটেরাইন প্রলাপস।
ইউটেরাইন প্রলাপস এর কারনেও ইউরিনে ইনফেকশন হতে পারে। ব্লাডার ফিস্টুলা ও ইউরিনে
ইনফেকশন এর জন্য দায়ী। এই শারীরিক গঠনগত সমস্যার কারণে ইউরিনে ইনফেকশন বারবার
হতে পারে।
প্রসাব আটকে থাকার কারণে
আমরা অনেক সময় ভ্রমণে যাওয়ার সময় প্রসাব আটকে রাখি। অথবা দেখা যায়
ইচ্ছাকৃতভাবে অলসতার কারণে প্রসাব আটকে রাখি। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত নানা
কারণে প্রসব আটকে রাখলে সম্ভাবনা থাকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটানোর।
ডায়াবেটিক,ছেলেদের প্রটেস্ট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া, প্রটেস্ট ক্যান্সার ও
কিছু নিউরোলজিক্যাল কারণে ইউরিনে ইনফেকশন বা প্রসাবের সংক্রমণ হতে পারে। আমাদের
উচিত হবে দীর্ঘক্ষণ প্রসাব আটকে না রেখে যথাসময়ে সেটি নিষ্কাশন করা।
হরমোন এর তারতম্যের কারণে
মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। এই হরমনটি কমে যাওয়ার কারনে
সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই বেড়ে যায়। ইউরিনে ইনফেকশন এর এটি একটি অন্যতম
কারণ।যে সমস্ত মানুষের ডায়াবেটিস আছে,
আরও পড়ুনঃ ঈদে ফ্যাশন হিসেবে নানা রকম জামা
তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে মূত্রের মধ্যে সুগার বেড়ে যায়।এতে ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই সংক্রমিত হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ ইউরিনে ইনফেকশন
হয়। এবং এই ইউরিনি ইনফেকশন বারবার হতে পারে।
ফরেন পার্টিকেল এর কারণে
যদি কোন ব্যক্তি দীর্ঘদিন মূত্র নালীতে যেকোনো ধরনের স্টেন্ট, ক্যাথেটার,টিউব, এর মত ফরেন পার্টিকেল ব্যবহার করে
তাহলে সেটি মূত্রনালীতে ইনফেকশন ঘটায়। অর্থাৎ এগুলোর জন্য ইউরিনে ইনফেকশন বা
প্রসাবে সংক্রমণ হয়।
যৌন সম্পর্ক ঘটানোর কারণে
সহবাসের সময় মেয়েদের মূত্রনালীতে ছোট ছোট ক্ষত হয়। একে বলা হয়
মাইক্রোট্রমা। আবার সহবাসের সময় কিছু জেল ব্যবহারের কারণে মূত্রনালীতে
থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো মরে যায়। এর কারণে মূত্রনালীতে বারবার ইনফেকশন
হয়।
আরও পড়ুনঃ বাংলা ১২ মাসের নাম ও ক্যালেন্ডার ২০২৫
অনেকেই জন্য নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে আইইউডি বাডিভাইস ব্যবহার করেন।
এছাড়াও স্পার্মিসিডাল জেল বা লিকুইড ব্যবহার করেন। এগুলোর কারণেও ইউরিন এ
ইনফেকশন হয়।
অপরিচ্ছন্নতা ও পানি কম খাওয়ার কারণে
মূত্রনালী সঠিকভাবে পরিষ্কার না করে রাখলে অথবা অপরিচ্ছন্ন কাপড় পরলে ইনফেকশন
এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কাপড় সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা উচিত। আবার অনেকে দিনে
খুব অল্প পরিমাণে পানি
পান করে থাকেন। এক লিটারের চেয়ে কোম্পানি পান করলে ইউরিন এ ইনফেকশনের ঝুঁকি
বেড়ে যায়। তাই দিনে কোন কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
ইউরিন এ ইনফেকশন হলে করণীয়
ইউরিন এ ইনফেকশন হলে প্রথমত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ইউরিনে ইনফেকশন
হওয়ার কারণটি খুঁজে বের করতে হবে এবং এর সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। প্রতিদিন
কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং বিভিন্ন ফলের জুস, ক্রানবেরি জুস, দই বা
ল্যাকটোব্যাসিলাস সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এই খাবারগুলো ইউরিন ইনফেকশন কমাতে
সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এই প্রসাবের চাপ এলেই প্রসাব করতে হবে। দীর্ঘ সময় প্রসাব আটকে রাখা যাবে না।
ইউরিনে ইনফেকশন হলে যে পোশাক পরা উচিত
ইউরিনে ইনফেকশন হলে সুতির অন্তর বাস পরতে হবে।সেটি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে
এবং সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। এছাড়া ও টয়লেট করার পর ভালোভাবে
গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে।
যৌন মিলনের আগে ও পরে অবশ্যই প্রস্রাব করতে হবে এবং ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মেনোপজের পর অনেক সময় চিকিৎসকেরা ইস্ট্রোজেন থেরাপি দেন এটি অনেক সময় ইউরিন
ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
মন্তব্যঃ ইউরিনে ইনফেকশন এর কারন ও করণীয়
ইউরিন ইনফেকশন হলে ঘাবরিয়ে না গিয়ে এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
হবে। নির্দিষ্ট নিয়ম পালন করার মাধ্যমে এই রোগটি নির্মূল করা সম্ভব। ইউরিনো
ইনফেকশন হলে আমাদের করণীয় হিসেবে উপরের নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে।
এবং হওয়ার আগেই এর কারণগুলো জেনে নিলে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এবং
সতর্ক থাকা যাবে। আমাদের সবার উচিত সতর্কতার সাথে সুস্থ জীবন যাপন করা।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url