পর্যায় সারণির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট ১১৮ টি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে। যদি কেউ রসায়ন অধ্যায়ন ও গবেষণা করতে চায় তাহলে তাকে সব কয়টি মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মৌলিক পদার্থ গুলোর মধ্যে কিছু মৌলিক পদার্থ একই রকম ধর্ম প্রদর্শন করে।
পর্যায় সারণিতে যে সকল মৌলিক পদার্থ একই রকম ধর্ম প্রদর্শন করে তাদেরকে একই
গ্রুপে রেখে সমগ্র মৌলিক পদের জন্য একটি ছক তৈরি করার চেষ্টা দীর্ঘদিন থেকে
চলছিল। কয়েক শত বছর ধরে অনেক বিজ্ঞানীদের চেষ্টা, অনেক পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের
ফলে আমরা মৌল গুলোকে সাজানোর একটি ছক পেয়েছি যেটাকে পর্যায় সারণী বলে।
পেজ সূচিপত্রঃ পর্যায় সারণির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
- পর্যায় সারণির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
- পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য সমূহ
- ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে মৌলের অবস্থান নির্ণয়
- পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি
- পর্যায় সারণিতে ব্যতিক্রম হিসেবে হাইড্রোজেনের অবস্থান
- পর্যায় সারণির ধাতব ও অধাতব ধর্ম
- পরমাণুর আকার বা পারমানবিক ব্যাসার্ধ
- পর্যায় সারণিতে আয়নীকরণ শক্তি
- ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতা
- মন্তব্যঃ পর্যায় সারণির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
পর্যায় সারণির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
পর্যায় সারণী একজন বিজ্ঞানীর একদিনের পরিশ্রমের ফলে তৈরি হয়নি বরং অনেক
বিজ্ঞানের অনেক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আধুনিক পর্যায় সারণি তৈরি হয়েছে।
১৭৮৯ সালে ল্যাভয়সিয়ে অক্সিজেন নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, মার্কারি জিংক
এবং সালফার ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ সমূহ কে ধাতু এবং অধাতু এই দুই ভাগে ভাগ করেন।
পরবর্তীতে ১৮২৯ সালে বিজ্ঞানী ডোবেরাইন তিনটি করে মৌলিক পদার্থের একই রকম ধর্ম
প্রদর্শন এর বিষয়টি লক্ষ্য করেন। এবং তিনি পারমাণবিক ভর অনুসারে তিনটি করে মৌল
সাজান। এরপর তিনি আরো খেয়াল করেন দ্বিতীয় মৌলের পারমাণবিক ভর প্রথম ও তৃতীয়
মৌলের পারমাণবিক ভরের যোগফলের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি। আর এই সূত্র কে বলা হয়
ডোবেরাইনারের ত্রয়ী সূত্র।
তিনি প্রথমে ক্লোরিন, ব্রোমিন ও আয়োডিনকে ত্রয়ী মৌল হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর
১৮৬৪ সাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলসমূহের জন্য নিউল্যান্ড অষ্টক সূত্র নামে একটি
সূত্র প্রদান করেন। অষ্টক সূত্র হলো যদিপর্যায় সারণির পারমাণবিক ভরের ছোট থেকে
বড় অনুযায়ী সাজানো যায় তবে যে কোন একটি মূলের ধর্ম তার অষ্টমূলের ধর্মের সাথে
মিলে যায়।
আরও পড়ুনঃ আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ
এরপর ১৮৬৯ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলি সকল মৌলের ধর্ম পর্যালোচনা করে একটি
পর্যায় সূত্র প্রদান করেন। মৌল সমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলই তাদের পারমাণবিক
ভর বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। এ সূত্র অনুসারে তখন পর্যন্ত ৬৩ মৌলকে
১২টি আনুমানিক সারি,
আর চারটি খাড়া কলামের একটি ছকে পারমাণবিক ভর বৃদ্ধি অনুসারে সাজিয়ে দেখানো হয়
যে,এই কলাম বরাবর সকল মৌলগুলো ধর্ম একই রকমের এবং একটি সারির প্রথম মৌল থেকে শেষ
মৌল পর্যন্ত মৌলগুলোর ধর্মের ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন ঘটে। এই ছকটির নাম দেওয়া হয়
পর্যায় সারণি।
পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য সমূহ
পর্যায় সারণি মূলত একটি ছক বা টেবিল। টেবিলে যেমন রো এবং কলাম থাকে এ পর্যায়
সারণিতেও তেমনি সারি ও কলাম আছে। পর্যায় সারণির বাম থেকে ডান পর্যন্ত বিস্তৃত
শাড়ি গুলোকে পর্যায়ে এবং খাড়া কলামগুলোকে গ্রুপ বা শ্রেনী বলে। পর্যায় সারণির
বর্গাকার ঘর গুলোতে মোট ১১৮ টি মৌল আছে। আধুনিক পর্যায় সারণির দিকে লক্ষ্য করলে
নিম্নের বৈশিষ্ট্য গুলো লক্ষ্য করা যাবে।
- পর্যায় সারণিতে সাতটি পর্যায়ে এবং ১৮টি গ্রুপ রয়েছে।
- প্রতিটি পর্যায়ে বাম দিকে গ্রুপ ১ থেকে শুরু করে ডানদিকে গ্রুপ ১৮ পর্যন্ত বিস্তৃত।
- মূল পর্যায় সারণির নিচে আলাদাভাবে ল্যান্থানাইড ও অ্যাকটিনাইড শাড়ির মৌল হিসেবে দেখানো হলেও এগুলো যথাক্রমে ৬ এবং ৭পর্যায়ের অংশ।
- পর্যায় ১ এ শুধু ২ মৌল রয়েছে। পর্যায় ২ এবং পর্যায় ৩ এ ৮টি করে মৌল রয়েছে। পর্যায় ৪ এবং পর্যায়ে ৫ এ ১৮ টি করে মৌল রয়েছে। পর্যায় ৬ এবং পর্যায় ৭ এ ৩২ টি করে মৌল রয়েছে।
- গ্রুপ ১ এ ৭ টি মৌল রয়েছে। গ্রুপ ২ এ ৬ টি মৌল রয়েছে। গ্রুপ ৩ এ ৩২ টি মৌল রয়েছে। গ্রুপ ৪ থেকে গ্রুপ ১২ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গ্রুপে ৪টি করে মৌল আছে। গ্রুপ ১৩ থেকে গ্রুপ ১৭ পর্যন্ত প্রত্যেকটিতে ৬টি করে মৌল রয়েছে। গ্রুপ ১৮ এ ৭টি মৌল রয়েছে।
যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৫৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত এরকম ১৫টি মৌলকে ল্যান্থানাইড
সারির মৌল বলা হয়। যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮৯ থেকে ১০৩ পর্যন্ত এরকম ১৫টি
মৌলকে অ্যাকটিনাইড শাড়ির মৌল বলা হয়। ল্যান্থানাইড সাড়ির মৌল গুলোর ধর্ম এত
কাছাকাছি এবং অ্যাকটিনাইড মৌলসমূহের ধর্ম এত কাছাকাছি যে তাদেরকে পর্যায় সারণির
নিচে ল্যান্থানাইড সাড়ির মৌল এবং অ্যাকটিনাইড সারির মৌল হিসেবে আলাদা ভাবে রাখা
হয়েছে।
ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে মৌলের অবস্থান নির্ণয়
আমরা কোন একটি মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে সহজেই মৌলটির গ্রুপ এবং পর্যায়ে বের
করতে পারব। পর্যায় বের করার নিয়ম হলো কোন মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের সবচেয়ে
বাইরের প্রধান শক্তির স্তরের নাম্বারই মৌলের পর্যায় নাম্বার। যেমন নাইট্রোজেনের
ইলেকট্রন সংখ্যা ৭। নাইট্রোজেনের ইলেকট্রন বিন্যাস 1S^2 2S^2 2P^3।
নাইট্রোজেনের পর্যায় নাম্বার ২।
গ্রুপ বের করার নিয়ম হলো-
- কোন মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের বাইরের প্রধান শক্তি স্তরে যদি শুধু s অরবিটাল থাকে তবে ওই s অরবিটাল এর মোট ইলেকট্রন সংখ্যায় ওই মৌলের গ্রুপ নাম্বার।
- কোন মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের বাইরের প্রধান শক্তি স্তরে যদি শুধু s ও p অরবিটাল থাকে তবে ওই s ও p অরবিটাল এর মোট ইলেকট্রন সংখ্যা সাথে ১০ যোগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায় সে সংখ্যায় ওই মৌলের গ্রুপ নাম্বার।
- কোন মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের সবচেয়ে বাইরের প্রধান শক্তি স্তরে যদি s অরবিটাল থাকে এবং আগের প্রধান শক্তি স্তরে যদি d অর বিটাল থাকে তবে s অরবিটাল ও d অরবিটাল ইলেকট্রন সংখ্যা যোগ করলে গ্রুপ নাম্বার পাওয়া যাবে।
পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি
ইলেকট্রন বিন্যাসের মাধ্যমে কোন মৌল ও কত নাম্বার গ্রুপে ও কত নম্বর পর্যায়ে
অবস্থান করে তা নির্ণয় করা যায়। যে সকল মৌলের বাইরের প্রধান শক্তি স্তরের
ইলেকট্রন বিন্যাস একই রকম সে সকল মৌল একই গ্রুপে অবস্থান করে। যে সকল মৌলের
ইলেকট্রন বিন্যাসে বাইরের প্রধান শক্তি স্তরে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা একটি সে সকল
মৌল সাধারনত ইলেকট্রন দান করে ধনাত্মক আয়ন পরিণত হওয়ার প্রবণতা দেখায়।
আবার যে সকল মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের বাইরের শক্তি স্তরে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা
৭টি সেই সকল মৌলের সাধারণত ১টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক কারণে পরিণত হওয়ার
প্রবণতা দেখায়। অতএব ইলেকট্রন বিন্যাসের মাধ্যমে পর্যায় সারণিতে মৌলের
অবস্থান নির্ণয় ও মৌলসমূহের অনেক ধর্ম ব্যাখ্যা করা যায়। এজন্য ইলেকট্রন
বিন্যাসকেই পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পর্যায় সারণিতে ব্যতিক্রম হিসেবে হাইড্রোজেনের অবস্থান
হাইড্রোজেন একটি অধাতু। কিন্তু পর্যায় সারণিতে হাইড্রোজেনকে তীব্র তড়িৎ
ধনাত্মক ক্ষার ধাতু Na, K, Rb, Cs ,Fr এর সাথে গ্রুপ ১ এ স্থান দেওয়া হয়েছে।
এর কারণ ক্ষার ধাতুর মতো হাইড্রোজেনের বাইরের প্রধান শক্তি স্তরে একটিমাত্র
ইলেকট্রন রয়েছে।
হাইড্রোজেনের অনেক ধর্ম ক্ষার ধাতু গুলোর ধর্ম সাথে মিলে যায়। আবার হ্যালোজেন
মৌল এর একটি পরমাণু যেমন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে হাইড্রোজেনে তেমনি একটি
ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে। হাইড্রোজেনের অনেক ধর্ম হ্যালোজেন মৌলের ধর্মের সাথে
মিলে যায় তাই একে ক্ষার ধাতুর সাথে গ্রুপ ১ এ স্থান দেওয়া হয়েছে।
পর্যায় সারণির ধাতব ও অধাতব ধর্ম
যে সকল মৌল চকচকে আঘাত করলে ধাতক শব্দ করে এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী তাদেরকে
ধাতু বলে। এবং যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নের
পরিণত হয় তাদেরকে ধাতু বলে। ধাতুর ইলেকট্রন ত্যাগের ধর্মকে ধাতব ধর্ম বলে।
যে মৌলের পরমাণুর যত সহজে ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারবে সেই মৌলের ধাতব ধর্ম তত
বেশি। যেমন লিথিয়াম একটি ধাতু কারণ লিথিয়াম একটি ইলেকট্রন ট্যাগ করে Li+ এ
পরিণত হয়। পর্যায় সারণিতে যে কোন মৌলের বাম থেকে ডানে গেলে ধাতব ধর্ম হ্রাস
পায়।
যে সকল মৌলের চকচকে নয় আঘাত করলে ধাতব শব্দ করে না এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহীর
নয় তাদেরকে অধাতু বলে। আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী যে সকল মৌল এক বা একাধিক
ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নের পরিণত হয় তাদেরকে অধাতু বলে। অধাতুর
ইলেকট্রন গ্রহণের ধর্মকে অধাতব ধর্ম বলে।
যে মৌলের পরমাণু যত সহজে ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারবে সেই মৌলের অধাতব ধর্ম তত
বেশি। যেমন ক্লোরিন একটি অধাতু কারণ ক্লোরিন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl-
এ পরিণত হয়। পর্যায় সারণিতে যেকোনো পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে অধাতব ধর্ম
বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুনঃ ইউরিনে ইনফেকশন এর কারন ও করণীয়
যে সকল মৌল কোন কোন সময় ধাতুর মত আচরণ করে এবং কোন কোন সময় অধাতুর মতো আচরণ
করে তাদেরকে অর্ধ ধাতু বা অপ ধাতু বলা হয়। আবার আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী যে সকল
মৌল কোন কোন সময় ইলেকট্রন ত্যাগ করে
এবং কোন কোন সময় ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাদেরকে অপধাতু বলে। পর্যায় সারণির
যেকোনো একটি পর্যায়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বামদিকের মৌল গুলো সাধারণত
ধাতু মাঝের মৌল গুলো সাধারণত অর্ধ ধাতু এবং ডান দিকের মৌলগুলো সাধারনত
অধাতু।
পরমাণুর আকার বা পারমানবিক ব্যাসার্ধ
পরমাণুর আকার তথা পারমানবিক ব্যাসার্ধ একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। যেকোনো একটি
পর্যায়ে এর যতই বাম দিক থেকে ডান দিকে যাওয়া যায় পরমাণুর আকার বা পারমানবিক
ব্যাসার্ধ তত কমতে থাকে এবং যেকোনো একটি গ্রুপের যতই উপর দিক থেকে নিচের দিকে
যাওয়া যায় পরমাণুর আকার বা পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তত বাড়তে থাকে।
একই পর্যায়ের বাম দিক থেকে যত ডান দিকে যাওয়া যায় পারমাণবিক সংখ্যা তত
বাড়তে থাকে কিন্তু প্রধান শক্তি স্তরের সংখ্যা বাড়ে না। পারমাণবিক সংখ্যা
বাড়লে নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং ইলেকট্রন সংখ্যা ও বৃদ্ধি
পায়। নিউক্লিয়াসের অধিক প্রোটন সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরের অধিক
ইলেকট্রন সংখ্যার মধ্যে আকর্ষণ বেশি হয়, ফলে ইলেকট্রন গুলোর শক্তি স্তর
নিউক্লিয়াসের কাছে চলে আসে ফলে পারমাণুর আকার ছোট হয়ে যায়।
একই গ্রুপে যতই উপর থেকে নিচের দিকে যাওয়া যায় ততই বাইরের দিকে একটি করে নতুন
শক্তি স্তর যুক্ত হয়। একটি করে নতুন শক্তি স্তর যুক্ত হলে পরমাণুর আকার বৃদ্ধি
পায়। একই গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে গেলে নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা এবং
বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রন সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আকর্ষণ বৃদ্ধি হয়ে পরমাণুর আকার
যতোটুকু হ্রাস পায় নতুন একটি শক্তি স্তর যোগ হওয়ার কারণে পরমাণুর আকার তার
চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। যে কারণে উপরের মৌলের চেয়ে নিচের মৌলের আকার বড় হয়।
পর্যায় সারণিতে আয়নীকরণ শক্তি
গ্যাসীয় অবস্থায় কোন মৌলের এক মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন
অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আইনে পরিণত করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে ঐ
মৌলের আয়নীকরণ শক্তি বলে। আয়নিকরণ শক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। একই
পর্যায়ের বামের মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি এবং ডানের মৌলের পারমাণবিক
ব্যাসার্ধ কম।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে আয়নীকরণ শক্তির মান বাড়ে এবং পারমাণবিক ব্যাসার্ধ
বাড়লে আয়নীকরণ শক্তির মান কমে। Na,Mg,Si,Al এর মধ্যে Si এর আয়নিকরণ শক্তির
মান বেশি। কারণ এই মৌল গুলোর মধ্যে Si পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মান সবচেয়ে কম।
অপরদিকে এই মৌল গুলোর মধ্যে Na এর পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মান বেশি বলে এদের
মধ্যে Na এর আইনিকরণ শক্তির মান কম।
ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতা
গ্যাসের অবস্থায় কোন মৌলের এক মোল গ্যাসীয় পরমাণুতে এক মোল ইলেকট্রন প্রবেশ
করিয়ে একমোল ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তি নির্গত হয় তাকে ঐ মৌলের
ইলেকট্রন আসক্তি বলে। ইলেকট্রন আসক্তি একটি পর্যায়ে বৃত্ত ধর্ম।
একই পর্যায়ের বামের মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি এবং ডানের মৌলের পারমাণবিক
ব্যাসার্ধ কম। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে ইলেকট্রন আসক্তির মান বাড়ে এবং
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে ইলেকট্রন আসক্তির মান কমে।
দুটি পরমাণু যখন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অণুতে পরিণত হয় তখন অনুর পরমাণুর
বন্ধনের ইলেকট্রন দুটিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণকে তড়িৎ ঋণাত্মকতা
বলে। তড়িৎ ঋণাত্মকতা একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম।
একই পর্যায়ের বামের মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি এবং ডানের মৌলের পারমাণবিক
ব্যাসার্ধ কম। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বাড়ে এবং
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান কমে।
মন্তব্যঃ পর্যায় সারণির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
পর্যায় সারণী বিভিন্ন রসায়নবিদের নিরলস প্রচেষ্টায় গড়া রসায়নের জগতে এক
অসামান্য অবদান। রসায়ন অধ্যায়ন নতুন, মৌল সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী, গবেষণা
ইত্যাদিতে পর্যায় সারণি বিরাট ভূমিকা পালন করে। কোন একজন বিজ্ঞানী কোনো একটি
বিশেষ প্রয়োজনের জন্য,
নতুন একটি পদার্থ আবিষ্কার করতে চাইলে তাহলে তাকে আগেই ধারণা করতে হবে যে নতুন
পদার্থটির ধর্ম কেমন হবে এবং সেই সকল ধর্ম বিশিষ্ট পদার্থ তৈরি করতে কি ধরনের
মৌল প্রয়োজন হবে।তার এ ধারণা পর্যায় সারণি থেকেই পাবে। রসায়ন জগতে তাই
পর্যায় সারণির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url