আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ

আইনকে যথাযথ জানার জন্য শুধু আইনের শ্রেণীবিভাগ করায় কাঙ্খিত নয় বরং এটা অত্যন্ত আবশ্যক। এই শ্রেণীবিভাজনের মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়মকে যেমন জানা যায় তেমন এগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কেও জানা যায়। বিভিন্ন যুগে দেশে দেশে আইনের শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়াস অব্যাহত আছে এবং যেটি আইনের বিগত ইতিহাসের দিকে তাকালে অনুধাবন হয়।

আইনের-শ্রেণীবিভাগ-ও-প্রকারভেদ
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রোমান আইনের ইতিহাসে সে দেশের আইনের শ্রেণীবিভাগের জন্য আইন বিশারদদের প্রয়াস লক্ষণীয়। আবার হিন্দু আইন বিশারদগণ দেওয়ানী আইনকে ও এরূপ এ শ্রেনীবিন্যাস করে গেছেন। আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ

আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ

আইন শব্দটি সাধারণত কোন দেশের প্রচলিত আইন পদ্ধতিকে বুঝিয়ে থাকে। একটি বিশেষ অর্থে কোন আইনকে বুঝানো দরকার হলে সংশ্লিষ্ট আইনের শিরোনামটি আইন শব্দটির পূর্ব ভাবে যুক্ত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চুক্তি আইন, পণ্য বিক্রয় আইন, কম্পানি আইন, ট্রেডমার্ক আইন ইত্যাদি। নানা ধরনের নীতি অনুসারে আইনের শ্রেণীবিভাগ করা হয় যার মধ্যে সম্বন্ধ নীতি প্রধান।

আইনের শ্রেণীবিভাগ এ সম্বন্ধের নীতি বলতে বোঝায় আইন দ্বারা কি কি সম্বন্ধের সমন্বয় সাধন করা হয়েছে তার নির্ধারণ। আইনের শ্রেনীবিভাগ এ সমন্বয় নীতির ভিত্তিতে দার্শনিক হল্যান্ড আইন সমূহ কে জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক আইন এই দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। আইনের শ্রেণীবিভাগ এ  জাতীয় আইন বলতে বোঝানো হয়েছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক প্রযুক্ত সকল আইনকে। জাতীয় আইন সমূহ কোনভাবেই অপর রাষ্ট্রের সম্পর্কে যুক্ত নয়।
আইনের শ্রেণীবিভাগ এ এই জাতীয় আইন কে সরকারি এবং ব্যক্তিভিত্তিক দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে অনেক দার্শনিক এর মতে আইনের অনুরূপ আইনের শ্রেণীবিভাগ কে মেনে নেওয়া হয়নি। তাদের মতে আইনের শ্রেণীবিভাগ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন এই দুই ভাবে বিভক্ত। আইনের শ্রেণীবিভাগ এ জাতীয় আইন সাংবিধানিক ও সাধারণ আইনে বিভক্ত। সাধারণ আইনকে সরকারি ও ব্যক্তিগত এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।

আইনের শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য সমূহ

কোন দেশের আইনের কাঠামোকে শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য প্রধানত দ্বিবিধ। প্রথমত আইনের শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য হলো শ্রেণীবিভাগের মাধ্যমে আইনের কাঠামোকে এমন একটি যুক্তিসঙ্গত রূপে উপস্থাপন করা সম্ভব যার মাধ্যমে আইন কে পরস্পর সংযুক্ত করা যায়। আইনের শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য হলো আইন কে কার্যকরী ও স্পষ্ট রূপে বিন্যস্ত করা। যার ফলে আইন সমূহ বুঝা প্রয়োগ করা এবং উন্নতি বিধান করা সহজ হয়। আইনের শ্রেণীবিভাগের এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আইনের শ্রেণীবিভাগ যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে হতে হবে এমন টা নয়। যেকোনো সহজবোধ্য শ্রেণীবিভাগ দ্বারাই আইনের শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য সফল করা যেতে পারে।

আইনের শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য তে আক্ষরিক শ্রেণীবিভাগ যুক্তিসঙ্গত না হলেও এর মাধ্যমে আইনবিদগণ প্রয়োজনীয় আইনটি দ্রুত খুজে নিতে পারেন। আইনের শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য বিষয় এ ব্রিটিশ আইনে আইনের শ্রেণীবিভাগটি সর্বত্র সাধারণভাবে গ্রহণীয় হয়েছে মর্মে গণ্য করা যায়। তারপরেও বিভিন্ন আইনের কাঠামো গুলিতে পরিদৃষ্ট বিভেদ শুধু এগুলোর ধারা গত সীমাবদ্ধতার অধীন নয় বরং শ্রেণীবিভাগের পদ্ধতি ও এই বিভেদ লক্ষ্য করা যায়। একসময় এমন ধারণা করা হতো যে আইনের এরকম একটি সার্বজনীন শ্রেণীবিভাগ করণ সম্ভব হবে যা সকল দেশের বিভিন্ন আইনের কাঠামো করতে গৃহীত হবে। কিন্তু বর্তমানে সেটি কোনভাবেই সম্ভব নয়। আইনের শ্রেণীবিভাগের উদ্দেশ্য এর ইতিহাসে ইংলিশ আইন রোমিও আইন-মুখী শ্রেণীবিভাগ গ্রহণ করেনি।

ইংলিশ আইনের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থাবলি বহু  ব্যবস্থার সংমিশ্রণ বিধায় উক্ত আইনের সুস্পষ্ট শ্রেণীবিভাগ অত্যন্ত কঠিন হয়েছে। আইনের শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে অনেক সময় আইনের ফৌজদারি কারণ সমূহ সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করা সম্ভব হয় না। একইভাবে টর্ট আইন, চুক্তি আইন ও নিম চুক্তি আইনের সীমারেখা অনেক ক্ষেত্রেই স্পষ্ট নয়। আইনের শ্রেণীবিভাগ এর উদ্দেশ্য তে এই বিষয়গুলো শ্রেণীবিভাগের সময় সমস্যা সৃষ্টি করে তাই শ্রেণীবিভাগের কোন সার্বজনীন নীতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে কোন সার্বজনীন কাঠামো থাকা বাঞ্ছনীয় তাহলে অন্তত ব্যক্তি ভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইনের নিয়মাবলী প্রবর্তন করা সহজ হবে।

আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতি

ইংল্যান্ডে গণ আইনের এবং ইকুইটি ক্রমবিকাশের ধারায় সম্মুখ উপলব্ধির মাধ্যমে বর্তমান আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতি ধারণা গ্রহণ করা যায়। আইনের কোন বিশেষ কাঠামোতে তার উৎসের ইতিহাসভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ অত্যন্ত উপযোগী। আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতি সম্পর্কে আইনবিদ হলান্ড অধিকারের ভিত্তিতে তা করার প্রতি সম্মতি দিয়েছেন। আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতিতে হল্যান্ডের মতে প্রাথমিক পর্যায়ে বস্তুগত অধিকার ও ব্যক্তিগত অধিকারের পার্থক্য ব্যবহার করা সমীচীন।

ইকুইটি আইন এমন সব অধিকারের জন্ম দিয়েছে যাকে কোন একটি বিশেষ পর্যায়ের অধীন করা অসম্ভব না হলেও সহজ নয়। সার্বিক তুলনামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের একটি সার্বজনীন শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য কোন কোন আইনবিদ প্রচেষ্টা করেছেন। তাদের মতে এভাবে শ্রেণীবিভাগ করা হলে বিশ্বের বিভিন্ন আইনের কাঠামো গুলোকে সুসংবদ্ধ করা সম্ভব হবে। অনেক দেশের আইনেই কোন কোন ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

আইন সম্পর্কে বিভিন্ন নীতির বিশ্লেষণের মাধ্যমে আইনের এরূপ শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতির অগ্রগতি সাধন করা যেতে পারে। আইনের প্রয়োগের সঠিক অনুধাবনের জন্য এর শ্রেণীবিভাগগত রূপায়ণের বিশ্লেষণ করা দরকার। আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে শুধুমাত্র বিশ্লেষণের উপর শ্রেণীবিভাগ এর সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা নীহিত থাকা যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আইনের কার্য সাধারনের দিকটা ও গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে।
আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে প্রাথমিক শ্রেণীবিভাগের জন্য বিভিন্ন সার্থকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করলেও বিন্যাসের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন সংস্থার স্বার্থ বিবেচনার ক্ষেত্রে কর্পোরেশন বাণিজ্যিক কর্পোরেশন ইত্যাদির আলোচনার সম্মুখীন হতে হয় এবং এর ক্ষেত্রে একই শিরোনামায় আইনের বিভিন্ন ধারা সমূহ আলোচনা করতে হয়। এই কারণে বিভিন্ন স্বার্থের আলোচনায় বিশ্লেষক মতবাদ বহুল পরিমাণে ব্যাহত হতে বাধ্য হয়।

সুতরাং আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে আইনের মূলনীতি সমূহ চিরচরিত প্রথা এ বিশ্লেষণান্তে বিভিন্ন শিরোনামভুক্ত আইন কে সত্যিকার কার্যের আলোকে বিবেচনা করায় অধিকতর শ্রেয়। আইনের শ্রেণীবিভাগের সম্ভাব্য পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ সম্পর্কে পূর্বাহ্নে সুস্পষ্ট জ্ঞান যদি না থাকে তাহলে আইনের কার্যকরী পরিধিকে সম্যক উপলব্ধি করা কঠিন হবে। তাই আইনের শ্রেণীবিভাগ এর সম্ভাব্য পদ্ধতিতে যদি আইনের যথেষ্ট বিশ্লেষণ না হয় তবে সুশৃংখলভাবে এর সংকলনও দুরূহ কাজ। কেননা আইনের শ্রেণীবিভাগ এর সম্ভাব্য পদ্ধতিতে কারণ বিশ্লেষণ ছাড়া সুশৃংখল শ্রেণীবিভাগ অসম্ভব।

প্রকৃতির আইন সম্পর্কে বিস্তারিত

যে সকল নিয়মকানুন যুক্তিসঙ্গত বা বিবেকসম্মত অথবা যে সকল বিধান সৃষ্টিকর্তার বিধান হিসেবে সকল মানুষের পথ নির্দেশনা প্রদান করে বা আচরণ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে সে সকল আদর্শ মুলক ও সার্বজনীন নীতিমালা কে প্রকৃতির আইন বলে। প্রাচীনকালে গ্রীক, রোমান ও আর্য পুরহিতগণ মানুষের যুক্তিসংগত আচরণ করার রীতিকে প্রকৃতির আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে শারীরিক, মানসিক, মানবিক ও ঐশ্বরিক প্রকৃতি বা প্রবৃত্তি হিসেবে প্রকৃতি শব্দটি ব্যবহৃত হবে। অনুরূপ দার্শনিক গণের বক্তব্য হল যুক্তি ও প্রকৃতির আইন একই বিষয় তথা এই দুইয়ের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য করা সম্ভব নয়।
আইনের-শ্রেণীবিভাগ-ও-প্রকারভেদ
প্রকৃতির আইনের মধ্যে সর্বোচ্চ যুক্তি স্থিত অবস্থায় রয়েছে। কোন ব্যক্তির কখন কি কাজ করা উচিত অথবা কি করা উচিত নয় তা তার বিবেকি নিদর্শন প্রদান করবে। প্রকৃতির আইনের এটি একটি অংশ। কোন লোক যদি জ্ঞানী হয় তবে তার মনে যুক্তি অবস্থান করতে বাধ্য, যার মাধ্যমে লোকটি সঠিক পথে নিদর্শন পেয়ে থাকে। এটি ও প্রকৃতির আইনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং সুস্থ ও পরিণত বয়স্ক মানুষের বিবেক কোন কাজ করার জন্য যে নিদর্শন প্রদান করবে তাকেই প্রকৃতির আইন বলা হবে। এজন্য পন্ডিতগনের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো যে জ্ঞান কাউকে ন্যায় সঙ্গত আচরণ করতে উৎসাহিত করবে ও অন্যায় কার্য হতে বিরত থাকার ইঙ্গিত দিবে তাই হবে প্রকৃতির আইন।

সুতরাং জ্ঞান বুদ্ধি প্রকৃতির আইনের নামান্তর। সময় বিবর্তনে মানুষের চিন্তায় ও চেতনায় পরিবর্তন আসে যার প্রভাবে আইনের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন আসে। মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায়ী প্রায় সকল দেশের সৃষ্টিকর্তার আইন কে প্রকৃতির আইন হিসেবে গণ্য করা হতো। প্রকৃতির আইনকে সনাতন যুগে মানুষের সহজ জাত মৌলিক অধিকারের সমপর্যায়ে গণ্য করা হতো। বিগত বর্তমান শতাব্দীতে প্রকৃতির আইন স্বাভাবিক ন্যায়বিচার এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রত্যয়গুলোর  মধ্যে একীভূত হয়ে আছে।

প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে বিস্তারিত

অধ্যাপক হল্যান্ডের মতে যে আইন নৈতিকতার অংশ হিসেবে মানবজাতির স্বার্থে পরিচালিত হয়ে তাদের দায়িত্বসমূহ নিয়ে গবেষণা করে তাকে প্রাকৃতিক আইন বলে। প্রাকৃতিক আইন সমূহ তে প্রাকৃতিক ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাই প্রাকৃতিক আইন সমূহ হলো অপরিবর্তনীয় এবং এদের মধ্যে বিশেষ কোনো ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় না।

অর্থাৎ প্রাকৃতিক জগতে যে সকল নিয়ম কানুন কোন নির্দিষ্ট ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাই প্রাকৃতিক আইন। প্রাকৃতিক জগতের সমুদয় বস্তুর আচরণে ঐক্য, সাম্য নিয়মনিষ্ঠা ও যথার্থতা ইঙ্গিত দেয় বিধায় মানুষের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় তাও প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণ করে।

প্রথা সিদ্ধ আইন সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রথাভিত্তিক আইন বলতে এমন একটি প্রথা বা প্রচলিত রীতিকে বোঝায় যা আইনে বিধিবদ্ধ বৈধ স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। আইনের প্রধান উৎস হিসেবে প্রথার গুরুত্ব ও ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। কোনো নিয়ম বা রীতিনীতি যদি কোন একটি বিশেষ পরিবারের অথবা কোন বিশেষ জনগোষ্ঠীর বা শ্রেণীর অথবা কোন বিশেষ অঞ্চলের ক্ষেত্রে বহুকাল যাবত প্রচলিত হওয়ার কারণে আইনের মর্যাদা ও যোগ্যতা অর্জন করে তবে তাকে প্রথা বলে।

আদিকাল হতে বহু রীতিনীতি ও বিধি নিষেধ প্রত্যেক সমাজেই চলে আসছে। সামাজিক জীবনের সাথে এগুলোর অতোব্রত সম্পর্ক বিদ্যমান। ফলে সামাজিক প্রয়োজনে এগুলি ধীরে ধীরে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাধ্যমে আইনের রূপ লাভ করে বিধায় প্রথা প্রায় সকল দেশের আইন ব্যবস্থায় একটি বিশাল অংশ জুড়ে বিরাজ করে। ভারতবর্ষের হিন্দু ও মুসলিম আইন এবং ইংল্যান্ডের কমন ল মূলত প্রথার উপর দন্ডায়মান। হিন্দু সমাজের যাবতীয় আইন শ্রুতি ও স্মৃতি নির্ভর এবং মনু, যজ্ঞবলক, জিমুতবাহন,নারদ প্রভৃতির লিখিত সংহিতা ভারতীয় হিন্দু সমাজের প্রথাসিদ্ধ আইন।

একইভাবে জাস্টিনিয়ানের বারবিধি,বেবিলনের হাম্বুরাবিকোড, এবং বৌদ্ধদের ত্রিপিটক প্রাচীন প্রথা সিদ্ধ আইনের মর্যাদায় ভূষিত। সাম্প্রতিককালের আইন বিশারদদের মধ্যে সেভেনি ও মেইন প্রথা সিদ্ধ আইন কে স্বাধীন আইন ও প্রাচীনত্তের নিরিখে এগুলোকে নাগরিক আইনের চেয়ে উৎকৃষ্ট মূল্য দিয়েছেন। কিন্তু তার জন অস্টিন কর্তৃক স্বীকৃতি পায়নি। এমনকি আন্তর্জাতিক আদালতে ও বিচার প্রশাসন কার্যে আইনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রথা কে গ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রচলিত আইন সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রচলিত আইন হলো এমন একটি স্বীকৃত রীতি বা দেশাচর যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কোন প্রচলিত ও নির্ধারিত আচরণবিধিকে পালন করার মাধ্যমে একে আইন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। স্যামন্ড এর মতে যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা রাষ্ট্র কোন বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে তারা পারস্পারিকভাবে কতিপয় প্রচলিত রীতি মেনে চলবে তখনই এরূপ আইনের সূত্রপাত ঘটে এবং এই রীতিগুলো পশ্চাতে যদি কোন বিরুদ্ধ উৎস অবর্তমান থাকে সেক্ষেত্রে ওই প্রচলিত প্রথাগুলোই নিয়ম বা আইনের ধারায় রূপান্তর লাভ করে।

তার মতে প্রাথাসিদ্ধ আইন শুধুমাত্র দেওয়ানী আইনের অংশ নয় বরং ব্যাপক অর্থে তা বিভিন্ন প্রকার আইন কেউ অন্তর্ভুক্ত করে। সুতরাং প্রচলিত আইন যেখানে রয়েছে সেখানে সংশ্লিষ্ট পক্ষ গ্রহণের সম্মতি আছে তা ধরে না যায়। অনেক ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন রাষ্ট্রীয় আইনের বিধান হিসেবেও কার্যকরী হয়ে থাকে। তাই প্রসঙ্গত রাষ্ট্রীয় আইন ও প্রচলিত বিধির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে এ দুয়ের মাঝে সম্পর্ক দেখা যেতে পারে। নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় আইন প্রণীত হয় আইন প্রণয়নের বৈধ ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র কর্তৃক, জানি নির্ধারিত সময় হতে বলবৎযোগ্যতা  লাভ করে।

অপরপক্ষে প্রচলিত বিধির সৃষ্টি হয় পক্ষ গুণের চুক্তি হতে এমনকি এরূপ বিধি ভঙ্গ করার দায় আদালত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। প্রচলিত আইনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো আন্তর্জাতিক আইন। যার মাধ্যমে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বিনিময়ের মাধ্যমে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আইন হিসেবে বরণ করে নেয়।

সাংবিধানিক আইন সম্পর্কে বিস্তারিত

একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে বর্ণিত আইন সমূহকেই সাংবিধানিক আইন বলা হয়। সাংবিধানিক আইন রাষ্ট্রের বিধানাবলী, সরকার ও বিচার বিভাগের গঠন, ক্ষমতা, পরস্পরের সম্বন্ধ নির্ণয় করে। এই আইন ছাড়া রাষ্ট্র সরকারের সাথে নাগরিকদের প্রকৃত সম্বন্ধ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। নাগরিকদের অধিকার বিধিবদ্ধ করে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এই আইনের অন্যতম লক্ষ্য।
তাই সাংবিধানিক আইনকে কোন দেশের মৌলিক আইন বলেও আখ্যায়িত করা হয়।ফিলিপস এর মতে সাংবিধানিক আইন বলতে এমন কতিপয় নিয়ামাবলির সমষ্টিকে বুঝায় যেগুলি দ্বারা একদিকে সরকারের গঠন ও কার্যকলাপ এবং অপরদিকে শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। গাইছি এ সম্পর্কে বলেন সাংবিধানিক আইন হলো সে সকল বিবিসমূহ যা ক্ষমতার বন্টন অথবা প্রয়োগ সরাসরি নির্দেশ করে।

কেসি হুউইয়ার এর মতে সাংবিধানিক আইন বলতে এমন কতিপয় নিয়মকানুনের সমষ্টিকে বোঝায় যে নিয়মের বলে সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় এবং তার অঙ্গরাজ্য সমূহ চূড়ান্তভাবে পরিচালিত হয়। সাংবিধানিক আইন যেমন কোন রাষ্ট্রের সংবিধান সম্পর্কিত আইন হিসেবে গণ্য হয় তেমন সাংবিধানের কোন সম্পর্কযুক্ত মৌলিক আইন ও এর অন্তর্ভুক্ত। সাংবিধানিক আইন হলো কোন রাষ্ট্রের মূল আইন বিধায় আইনের পরিমন্ডলে সকল দেশেই সংবিধান সম্বন্ধীয় আইনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।

সাধারণ আইন সম্পর্কে বিস্তারিত

সাধারণ অর্থে ইংল্যান্ডে আইনকে সংবিধিবদ্ধ আইন, ন্যায়পরতা আইন ও সাধারণ আইন এই তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। স্যামন্ডের মতে সাধারণ আইন কে ইংলিশ আইনের পূর্ণাঙ্গ রূপ হিসেবে গ্রহণ করা যায়।কমন ল শব্দটি নরম্যান বিজয়ের পর হতে ইংল্যান্ডের রাজার বিচার পদ্ধতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে উন্নয়ন লাভ করতে থাকে।

ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ইত্যাদির দেশে প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন তথা সিভিল ল এর বিপরীত পদ্ধতি হিসেবে ইংল্যান্ডে কমন ল বা সাধারণ আইন পদ্ধতি প্রচলন হতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কমল ইংল্যান্ডের প্রথম উইলিয়াম ও প্রথম এডওয়ার্ড এর রাজত্বকাল থেকে পরী পুষ্টি লাভ করে আসছে।
আইনের-শ্রেণীবিভাগ-ও-প্রকারভেদ
তখন থেকেই এই আইনের মাধ্যমে জনগণের নাগরীক অধিকার, সহায় সম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সরকার কর্তৃক যে সকল নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি, আচার ব্যবহার, প্রথা প্রচলন অনুসরণ করা হতো, তাই পরবর্তীতে সাধারণ আইনের রূপ পরিগ্রহ করে।

মন্তব্যঃ আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ

সাঢারণ অর্থে আইন হলো কতগুলো নীতিমালা। এই নীতিমালা বিচার বর্গ দ্বারা নির্ধারিত ও স্বীকৃত কতিপয় মৌলিক ভিত্তির উপর দণ্ডায়মান। এসব মৌলিক ভিত্তির ভিন্নতার কারণে আইনকেও বিভিন্ন প্রকরণে বিভক্ত করা হয়।

আইনের উৎস, প্রকৃতি, প্রণয়ন, প্রয়োগ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকারিতার নিরিখে সাধারণত এর প্রকারভেদ অধিকাংশ লেখক মেনে নিয়েছেন। উপরে এটা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। উপরোক্ত লেখাগুলো পড়ার মাধ্যমে আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। 
 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url