তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের পরিচর্যায় মধু বিশেষভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মধুর ভেতরে
থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান বিশেষভাবে ত্বকের ছোট বড় সকল সমস্যা সমাধানে
সাহায্য করে। তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণ যুক্ত ত্বক সহ ত্বকের নানা সমস্যা
দূরীভূতে মধু সাহায্য করে।
বিভিন্ন মৌসুমে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেসব সমস্যা মোকাবেলায়
মধু এক অনন্য ভূমিকা পালন করে।তৈলাক্ত ত্বক ছাড়াও শুষ্ক ত্বকে মধু ব্যবহার করা
যায়।
পেজ সূচিপত্র: তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
- তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
- যে কারণে তৈলাক্ত ত্বকে মধু মাখবেন
- তৈলাক্ত ত্বকে মধু লাগালে যা যা উপকার হয়
- তৈলাক্ত ত্বকে ফেসপ্যাক হিসেবে মধু
- তৈলাক্ত ত্বকে মধু ও টক দই
- তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ফেসিয়ালে উজ্জল ত্বক
- তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বলে মধু ব্যবহার
- তৈলাক্ত ত্বকের দাগ কমাতে মধু ব্যবহার
- ত্বকের জন্য মধু ক্ষতিকর কিনা
- মন্তব্য: তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
গরমকালে অতিরিক্ত গরমের কারণে অধিকাংশ মানুষের ত্বকই তৈলাক্ত থাকে।এই
তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য মধু কে ময়শ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা
যায়।পদ্ধতিটি হলো
- অর্ধেক কাপ মধুর সাথে অর্ধেক কাপ তরল দুধ মিশাতে হবে। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।এবং শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এক চামচ মধু ও এক চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ত্বকে লাগান এবং ম্যাসাজ করুন।স্বাভাবিক পানি দিয়ে সেটি ধুয়ে ফেলুন।
- এক চামচ মধু ও হাফ চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিন। তারপর সেটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
যে কারণে তৈলাক্ত ত্বকে মধু মাখবেন
তৈলাক্ত ত্বকে আমরা অনেক সময় না বুঝেই যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকি।
কিন্তু সব ধরনের উপাদান ত্বকের জন্য উপকারী নয় বরং ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কিন্তু ত্বকের উপকারে মধুর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
মধুর প্রতিটি উপাদান তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।মধুতে থাকা প্রতিটি উপাদানই
প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। সেজন্য সকলের উচিত প্রাকৃতিকভাবে এই
পদ্ধতি ব্যবহার করে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করা।
তৈলাক্ত ত্বকে মধু লাগালে যা যা উপকার হয়
তৈলাক্ত ত্বকে যেসব ব্যাকটেরিয়া থাকে, মধুতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন থাকায়
সেসব ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়।মধুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কারণে
ত্বক মসৃণ থাকে এবং ত্বকের বার্ধক্য ভাব দূর করে।
আরো পড়ুন:
এটি শুষ্ক ত্বকের আদ্রতা ফেরায়।এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।তৈলাক্ত তাকে মধু
ব্যবহারের কারণে অন্যান্য উপাদান ব্যবহারের চেয়ে এটা দ্রুত কার্যকরী
ভূমিকা রাখে।
তৈলাক্ত ত্বকে ফেসপ্যাক হিসেবে মধু
মধুতে উপস্থিত অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ত্বকের প্রদাহ কমায়।কাজেই মধুর সাথে
অন্য কিছু উপাদান মিশিয়ে নিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। এবং এটি তৈলাক্ত ত্বকের
জন্য খুবই উপকারী।
ডিমের সাদা অংশ এক চামচ ও এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে।এই মিশ্রণটি ত্বকে
লাগিয়ে রাখতে হবে বিশ মিনিট।তারপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।এই
ফেস প্যাকটি ত্বককে আদ্র রাখে।
এক চামচ মধু ও এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে হবে।এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১০
মিনিট রাখতে হবে।স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই ফেসপ্যাকটি ত্বকের
মৃত কোষ দূর করবে।
তৈলাক্ত ত্বকে মধু ও টক দই
টক দই এ ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম,প্রোটিন,ভিটামিন বি সিক্স, টুয়েলভ,ফসফরাস
ইত্যাদি থাকে।এবং মধুতে আছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।এই
উপাদানগুলো তৈলাক্ত ত্বক এ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এক চামচ মধুর সাথে এক চামচ টক
দই মিশিয়ে নিন।
২০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি
ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করবে এবং ব্রণের সমস্যাও দূর করবে।এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা ও
বাড়াবে।সেই সাথে ত্বকের আদ্রতা বাড়াবে।
তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ফেসিয়ালে উজ্জল ত্বক
আমরা অনেকেই ফেসিয়ালের জন্য অনেক টাকা খরচ করি।অনেক সময় কৃত্রিম উপাদানে করা
ফেসিয়াল ত্বকের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তৈলাক্ত ত্বকে মধুর মাধ্যমেই
ফেসিয়াল করা সম্ভব। প্রথমে স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে
হবে।এরপর মুখে মধু লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।তারপর অল্প পানি দিয়ে মুখে
ম্যাসাজ করতে হবে।পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
আরো পড়ুন:
এরপর মধুর সাথে চালের গুড়া মিশিয়ে নিতে হবে।এই মিশ্রণটি মুখে নিয়ে মেসেজ
করুন।১০ থেকে ১৫ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এরপর এক চামচ মধু
গোলাপজল এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে লাগান।শুকিয়ে গেলে সেটি স্বাভাবিক
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এভাবেই মধু দিয়ে বাড়িতে বসে ফেসিয়াল করতে পারেন।
তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বলে মধু ব্যবহার
ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায় ত্বকের কোষ মারা গেলে।এবং ত্বক অনাদ্র হলে।তেলতেলে
ত্বক মানেই কিন্তু আদ্র ত্বক নয়।দেখে আদ্র মনে হলেও তেলতেলে ত্বক অনেক সময়
অনাদ্র ত্বক হয়।তৈলাক্ত ত্বকে যদি মধু ব্যবহার করা হয় তাহলে ত্বকের কোষগুলো
ধ্বংস হওয়া কমায়।
যার ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।তৈলাক্ত ত্বকে যদি মধু ব্যবহার করা হয় তাহলে তো
ত্বকের অনাদ্র ভাব কমিয়ে দেয় এবং ত্বককে মসৃণ করে তলে।যার কারণে ত্বক দেখতে
উজ্জ্বল লাগে।এভাবে তৈলাক্ত ত্বকে মধু ব্যবহারের ফলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল
দেখায়।
তৈলাক্ত ত্বকের দাগ কমাতে মধু ব্যবহার
তৈলাক্ত ত্বকের মুখের দাগ দূর করতে অনেকের দামী প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। সেই
সকল দামি প্রসাধনী থেকে মধু খুব দ্রুত এবং বেশি কাজ করে।মধুতে থাকা ব্যাকটেরিয়া
ত্বকের দাগকে কমিয়ে আনে। তৈলাক্ত ত্বকের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে ত্বকে
নিয়মিত মধু মাখতে হবে।সেজন্য প্রথমে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলতে হবে।
এরপর মধু আলতো করে মুখে লাগাতে হবে।শুকিয়ে যাবার পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ
ধুয়ে ফেলতে হবে।প্রতিদিন রাতে নিয়মিত এভাবে মুখে মধু মাখলে তৈলাক্ত ত্বকের দাগ
দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
ত্বকের জন্য মধু ক্ষতিকর কিনা
ত্বকের জন্য মধু ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী। বিশেষ করে মধু তৈলাক্ত ত্বকের জন্য
ব্যবহার করা ভালো।তৈলাক্ত ত্বকে মধু তেল উৎপাদনের ভারসাম্যতা বজায় রাখে।যেসব
ব্যাকটেরিয়া ত্বকে ব্রণ উৎপাদন করে সেসব ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।এবং ত্বকের
ছিদ্র আটকে না রেখে হাইড্রেশন দেয়।
আরো পড়ুন:
মধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে ফর্সা করে।ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে
দেয়।ত্বক কে রাখে মসৃণ।মধুতে প্রাকৃতিক গুন থাকায় অন্যান্য প্রসাধনীর চেয়ে এর
উপকারিতা বেশি।
মন্তব্য: তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
মধুর মধ্যে প্রাকৃতিক গুণ থাকায় তৈলাক্ত ত্বকে মধু ব্যবহার খুবই উপকারী। বাজারে
যেসব প্রসাধনী পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
কিন্তু মধু প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।মধুতে
উপস্থিত রাসায়নিক উপাদানগুলো প্রাকৃতিক হওয়ায় ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের
যত্নে অন্যান্য প্রসাধনীর তুলনায় মধু ব্যবহারে খরচ কম।বসেই ত্বকের যত্ন মধুর
মাধ্যমে করা যায়।যার কারনে ত্বকের যত্নে এটি সাশ্রয়ী।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url