অপরাধ কি ? অপরাধের সংজ্ঞা ও প্রতিকার
অপরাধ হলো কোন ব্যাক্তি কর্তৃক প্রচলিত আইন বিরোধী কাজ । যখন কোন দেশে আইন থাকে সেই দেশের আইন কানুন মেনে না চলায় হলো অপরাধ । অপরাধ পদটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Crime,Felony,Fault,Guiltইত্যাদি।
সাধারনত অপরাধবলতে গুম,খুন,ধর্ষণ,চুরি,ডাকাতি,রাহাজারি,সন্ত্রাসী ইত্যাদি বুঝায় । প্রায় প্রত্যেকটি দেশেয় এই কাজ সমূহ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ।
পেজ সূচিপত্র:অপরাধের সংজ্ঞা ও প্রতিকার
অপরাধের সংজ্ঞা
সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি বা সমাজের সমস্যা
সৃষ্টি করে যে সকল কাজ করেন তাই অপরাধ
।
বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ অপরাধকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করে গেছেন । বিজ্ঞানী পারমিলি অপরাধ শব্দের সজ্ঞায় বলেন “অপরাধ হলো আইন দ্বারা নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য এমন কোন কাজ যা প্রায়
সর্বদাই প্রচলিত নৈতিক মানদন্ড অনুযায়ী গর্হিত বলে বিবেচিত হয়
।” অসবর্ন এর মতে, “অপরাধ হলো এমন একটি অন্যায় কাজ যা সমগ্র
সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং যে কারনে এটা আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তার
নির্ণিতব্য মাত্রার অপর ভিত্তি করে সরকার আইনের মাধ্যমে যথাযথ দন্ড প্রদানের
ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন ।অপরাধের কারন
অপরাধের মূল কারন নির্দিষ্ট নেই । তবে আইন গবেষকগণ ও সমাজ বিজ্ঞানী গণ অপরাধের কারন সমূহ কে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করেছেন । কোন গবেষক এর মতে এটি শারীরিক , মানসিক ও দৈহিক কারন । আবার কারো মতে এটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদির কারন । নিচে অপরাধের কারন সমূহ আলোচনা করা হলোঃ-১) শারীরিক ও মানসিক কারনঃ
শারীরিক ভাবে দুর্বল মানুষ অথবা শারীরিক ভাবে ত্রুটিযুক্ত মানুষ মানসিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তখন সে নানা অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িত হয়ে যায় । আবার শারীরিকভাবে সুঠাম দেহের অধিকারী মানুষ দূর্বল মানুষদের তাচ্ছিল্য করে । এতে দূর্বল দেহের মানুষ মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আর অপরাধের সাথে যুক্ত হয় । অপরাধ তথ্যের জনক Lombroso এর মতে অপরাধের কারন দেহ থেক হয়ে থাকে । এমনি ভাবে, Hoton ১৭০০ মার্কিন মামলা দিয়ে গবেষণা চালিয়ে অপরাধের কারন হিসেবে শারীরিক বৈশিষ্ট কে দায়ী করেন ।
২) পারিপার্শ্বিক অবস্থাঃ
পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলতে সাধারনত কোনো অঞ্চলের আবহাওয়া,জলবায়ু ও ভৌগলিক অবস্থা ইত্যাদি কে বোঝায় । জলবায়ুর পার্থক্যের কারনে অপরাধেরও পার্থক্য ও মাত্রার পার্থক্য দেখা যায় । যেসব মানুষ শীত অঞ্চলে বসবাস করে তারা একে অপরে সাথে যোগাযোগ ,সাক্ষাৎ,মেলামেশা কম হয় সেসব মানুষদের তুলনায় যারা গ্রীষ্ম অঞ্চলে বসবাস করে । তাই শীতের অঞ্চলের মানুষের সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ বেশি হয় ।
এ সমন্ধ্যে ল্যাম্ব্রোসো বলেন, “সমতল ভূমিতে যেরূপ নারীহরণ ও বলাৎকার সচরাচর দেখা যায় পার্বত্য অঞ্চলে সেরূপ দেখা যায় না ।”
৩) বংশগত কারনঃ
অপরাধের সূচনা বা উৎপত্তি হিসেবে বংশগত কারন একটি অন্যতম কারন । একজন ব্যক্তি তার প্রাথমিক শিক্ষা তার বাবা-মা থেকে পেয়ে থাকে । যদি পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তখন সন্তানের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে । তখন সেই সন্তান আস্তে আস্তে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে । বিশেষত মাদকাসক্ত হয় । আবার মাদকাসক্ত পিতা তার সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দানে ব্যর্থ হয় । যার ফলশ্রুতিতে সন্তানরা অপরাধ প্রবন হইয়ে ওঠে । এছাড়া পিতা-মাতার নৈতিক চরিত্রহীনতার প্রভাবেও সন্তানরা অপরাধ প্রবণ হয় ।
৪)অর্থনৈতিক কারনঃ
অর্থনৈতিক কারনেও মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে । দারিদ্রতা অপরাধের একটি অন্যতম কারন । দরিদ্র পরিবারের সদস্যগণ তার নিত্য দিনের চাহিদা গুলো পুরোন করতে পারে না । যার ফলে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটনোর জন্যে চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধের সাথে যুক্ত হয় ।
আবার বেকারত্ব ও অপরাধের একটি কারন । বেকারত্বের কারনেও চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধ সংগঠিত হয় । অন্যদিকে বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী তার উপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তা কে এবং নিজেকে আর্থিকভাবে লাভবান করার জন্যে ঘুষ খায় এবং তাদের ক্ষমবলে দুর্নিতিও করে ।
অপরাধের প্রতিকার
- পারিবারিক অশান্তি,দ্বন্দ,কলহ পরিহার করতে হবে ।
- মাদকমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে ।
- প্রাপ্তবয়স্কদের দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে ।
- দেশের আইন কানুন এ কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে ।
- ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে ।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url