ফিলিস্তিন শব্দটি আরবি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি মধ্যপপ্রাচ্যে নির্বাসন ঘোষিত একটি
দেশ।এ দেশের রাজধানীর নাম জেরুজালেম।এর শহর সমূহের নাম হল গাজা,রমাল্লাহ পশ্চিম
তীর,জেরুজালেম। প্যালেস্টাইন জাতীয় পরিষদ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো পিএনসি। এবং
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো পিএলও।
১৯৮৮ সালের ১৫ ই নভেম্বর পিএনসি এবং পিএলও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা
করে।মূলত স্বাধীনতা ঘোষণ করার কারণ হলো স্বাধীন ফিলিস্তিনের কিছু অংশ কে
কুটকৌশল খাটিয়ে ইজরায়েল দখল করে নিয়েছিল।যার কারণে ফিলিস্তিন তার সার্বভৌমত্ব
হারায়। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি ধর্মীয় দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আর এর ইতিহাসও ধর্মীয়
দিকের সাথে সম্পর্কিত।বিশ্বে প্রাচীন অনেক সভ্যতা রয়েছে যেমন ফোয়েনিসিয়া
সভ্যতা,মিশর সভ্যতা,মেসোপটেমিয়া,সিরিয়া ইত্যাদি।ঠিক এমনই একটি প্রাচীন সভ্যতা
হলো ফিলিস্তিন।
আদি ফিলিস্তিনে মানুষ কৃষি নির্ভর জনসমষ্টি এবং সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। আর এই
সভ্যতাটি ব্রোঞ্জ যুগের উপরোক্ত সভ্যতা দ্বারা প্রভান্বিত ছিল। ফিলিস্তিনি ও
ইসরাইলি গোষ্ঠীর মূলে রয়েছে আব্রাহাম অর্থাৎ ইব্রাহিম (আঃ)। ইব্রাহিম (আঃ) এর
পুত্র হলেন ইসহাক (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)।
ইসহাক (আঃ) এর পুত্র হলেন ইয়াকুব (আঃ)। ধর্ম প্রচারের স্বার্থে তৎকালীন
কেনান থেকে বর্তমান ফিলিস্তিন অঞ্চলে চলে আসেন ইয়াকুব (আঃ)। ইয়াকুব (আঃ) এর
বংশধর ইজরায়েল ও মুসলিম দুই ভাগে ভাগ হয়। মূলত ইয়াকুব (আঃ) কেই ইসরাইল বলা
হত।আর এখানেই তৈরি হয় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনের জলবায়ু ও খাদ্য
ফিলিস্তিনের তিনটি শহরের মধ্যে পশ্চিম তীরের জলবায়ু ভূমধ্যসাগরীয়। ফিলিস্তিনের
শীতলতম মাস হল জানুয়ারি এবং উষ্ণতম মাস হল আগস্ট। জানুয়ারিতে বৃষ্টি কম হয় এবং
তাপমাত্রা থাকে ৬০° সেলসিয়াস বা ৪৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট।
ফিলিস্তিনের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের হার ১১৬ মিমি। ফিলিস্তিনের উপকূল রেখার তুলনায়
উঁচু এলাকা হালকা শীতল। এবং ফিলিস্তিনের পশ্চিমে অঞ্চল। ফিলিস্তিনিদের প্রধান
খাদ্য হলো ভাত,কিব্বি,রুটি, মাংস, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও মসুর ডাল।
এ খাবারগুলো তাদের দৈনন্দিন খাবারের অন্তর্ভুক্ত। মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গুলোর
মধ্যে ফিলিস্তিনিরা মিষ্টি যুক্ত চিজ, খেজুর, বাদাম,আখরোট,পিসতা খেয়ে থাকেন।
ফিলিস্তিনিরা পানীয়র মধ্যে ক্যারব,তেতুল,এপ্রিকট এর রস খান।
ফিলিস্তিনিরা মদ বা অ্যালকোহল সাধারণত গ্রহণ করেন না।ফিলিস্তিনিদের খাদ্য অভ্যাস
খুবই আকর্ষণীয়। তারা ধর্মীয়ভাবে বৈধ ও খাবার গুলোর দিকে গুরুত্ব বেশি দিয়ে
থাকেন। এবং ধর্মীয় দিক থেকে যেগুলো অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে,
যেমন অ্যালকোহলের মত খাবার গুলো তারা গ্রহণ করেন না। পশ্চিমারা যেমন শুকুরের মাংস
গ্রহণ করে ফিলিস্তিনিরা এই ধরনের কোনো খাদ্য গ্রহণ করে করে না।
পর্যটন স্থান হিসেবে ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুজালেম,পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকার পর্যটন রয়েছে।
প্রায় ৪.৬ মিলিয়ন মানুষ ২০১০ সালে ফিলিস্তিন অঞ্চল ভ্রমণ করেছিল। এ পর্যটন
কেন্দ্র গুলোতে অধিকাংশ মানুষ স্বল্প সময়ের জন্য ভ্রমণ করতে আসেন।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর পর্যটনটি ইজরায়েলি সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এবং
গাজায় প্রবেশও ইসরাইলি সরকার তদারোকি করে। কাজেই ফিলিস্তিনে পর্যটন কেন্দ্রগুলো
ভ্রমণ বর্তমানে কঠিন। আর এই কাজ টি কঠিন করে দিয়েছে ইহুদিরা।
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালের ১০ জানুয়ারি জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এবং এ জাতিপুঞ্জের মাধ্যমে ব্রিটিশরা ম্যান্ডেটরি প্যালেস্টাইন প্রতিষ্ঠা করে।
এবং এরপরই সংঘটিত হয় আলিয়াহ। আলিয়া মানে হল ইহুদিরা দলে দলে ফিলিস্তিনে একত্র
হওয়ার প্রক্রিয়া।
মূলত এই প্রক্রিয়ার কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বোমা তৈরির উপকরণ কৃত্রিম
ফসফরাস তৈরি। তৎকালীন ইহুদি বিজ্ঞানী হেইস বাইজম্যান এই কৃত্রিম ফসফরাস তৈরি
করেছিলেন এবং ব্রিটেন কে উপহার দিয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ ব্রিটেন প্রধানমন্ত্রী
ইহুদিদের ভূখণ্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
আর এই প্রতিশ্রুতির ফলস্বরূপ ইহুদিরা একত্রিত হওয়া শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার
ইহুদীদের ফিলিস্তিন দখলে সহায়তা করে অর্থাৎ তাদের জন্য ফিলিস্তিন উন্মুক্ত করে
দেয়। তার পাশাপাশি ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে এবং আস্তে আস্তে
নিজেদের সুদৃঢ় করে তোলে।
ইহুদিরা এর জন্য বাহিনী গঠন করে। সেই বাহিনী বা সংগঠনগুলো হলো ইরগুন,স্টার্ন
গ্যাং, হাগানাহ। এই তিনটি সংগঠন ধর্ষণ, সন্ত্রাস, হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদির মাধ্যমে
ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য করে।
ফিলিস্তিনের সাথে ইজরাইলের সংঘাত
ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করার সময় থেকেই ইজরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনের সংঘাত চলতে
আছে।এই ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় দেখা যায় ফিলিস্তিনিদের ওপর অন্যায় ভাবে
ইহুদিরা ধর পাকর ও দখলদারী চালাচ্ছে।বর্তমানে ফিলিস্তিনের চলমান সংঘাতের কারণ হলো আবারো জোর করে দখলদারি
চালানো।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের কিছু অঞ্চল
দখলের জন্য ফিলিস্তিনি নিরীহ নারী ও শিশুদের সহ সকল জনগণের উপর বোমা
বর্ষণ এর মাধ্যমে হামলা চালাচ্ছে।ফিলিস্তিনের লক্ষ লক্ষ নিরিহ শিশু ও নারী এবং নিরস্ত্র সাধারণ জনগণ আহত
এবং নিহত হচ্ছেন।
এরই জবাবে সশস্ত্র বাহিনী হামাস ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরাইলে রকেট বর্ষণ করেছেন।
মাঝে মাঝে যুদ্ধ বিরতি থাকলেও নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই এ
সংঘাত ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। প্রাণ যাচ্ছে ফিলিস্তিনি অসহায় নিরস্ত্র
মুসলমানদের।
ইজরায়েলের বাহিনীর সাথে পরোক্ষভাবে যোগদান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজরায়েলের এই বর্বরতা থেকে
পরোক্ষভাবে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হামলাতে সৈন্য
দিয়েও সহায়তা করছে ট্রাম্প।
ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার
ফিলিস্তিনিদের উপর অত্যাচার চলছে অনেক কাল থেকেই। ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার পর ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার চলে আসছে।সর্বশেষ হামলার পর
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন গাজায় নিশংসতা কেবল শুরু
হয়েছে।
তারা এবার সর্বশক্তি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের নির্বাসনের ব্যবস্থা চালাচ্ছেন। তারা
নিরস্ত্র মানুষের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। বোমা বিস্ফোরণ সহ ট্যাঙ্ক দ্বারা
আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা বড় বড় দালানগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। মসজিদ গুলো গুঁড়িয়ে
দিচ্ছে।
রকেট হামলার মাধ্যমে তারা হাজার হাজার নিরীহ শিশু ও নারীর প্রাণ নিচ্ছে। সদ্য
জন্মগ্রহণ করা শিশু ও বাদ যায়নি তাদের আক্রমণ থেকে। তাদের কার্যক্রম মানবতা
বিরোধীর চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। এই ধর্মপ্রাণ মুসলমান অপর মুসলমানের উপর
অত্যাচার কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ
সমর্থন দিয়েছেন এবং ইসরাইলি কার্যক্রমকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের বড় আলেমদের মধ্যে একজন হলেন শাইখ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন,আমরা আজ
নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দু চার কলম লেখা,তাদের সহমর্মিতায় কখনো
রাস্তায় মানববন্ধন করা, তাদের পক্ষে একটু প্রতিবাদ করা এ দায়িত্ব টুকুই আমরা
পালন করছি না।
আমি একজন বাংলাদেশী হিসেবে লজ্জিত হই কারণ, ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের মত
এরকম নির্লজ্জভাবে এতটা নিরব,স্তব্ধতা পৃথিবীর কোন দেশে চোখে পড়েনি।
বাংলাদেশের জনগণ সোশাল মিডিয়া সহ ইউটিউব ও বিভিন্ন জায়গায় ফিলিস্তিনিদের
পক্ষে লেখালেখি ও পোস্ট করছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে ও ফিলিস্তিনিদের কে সমর্থন
জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সংস্থা
আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো
জাতিসংঘ। জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেটির নামমাত্র
শান্তি প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। মন গড়া নিয়মকানুন বানিয়ে এবং এর ফাঁকফোকর
দিয়ে পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিশ্চুপ রয়েছে এই সংগঠনটি।
তবুও বিশ্বের জনগণকে দেখানোর জন্য কিছু ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে নিজের দায়
মুক্ত করতে চাচ্ছে জাতিসংঘ। ফিলিস্তিনিদের সহায়তার জন্য আনরোয়া নামে একটি
কার্যক্রম শুরু করেছে তারা। কিন্তু ইসরাইলের কার্যক্রমটি তাদের দেশে বাতিল বলে
বিল পাস করেছে।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসন চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ চলছে। এই
দুর্ভিক্ষ নিরসনে বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ সহায়তা আসছে। বিশেষ করে বিশ্বের
মুসলিম দেশগুলো ত্রাণ সহায়তা প্রদান করছে। তবে জাতিসংঘ কে এ সমস্যা মোকাবেলায়
তেমন কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র কি না
একটি রাষ্ট্র গঠনের উপাদান হলো চারটি। ভূমি,জনসংখ্যা,সরকার,সার্বভৌমত্ব এই
চারটি উপাদান নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। ফিলিস্তিনের জনসংখ্যা ভূমি এবং
সরকার থাকলেও তাদের সার্বভৌমত্ব নেই। ইহুদি জাতি তাদের সার্বভৌমত্ব হরণ
করেছে।
তাই বিশ্বের অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আবার অনেক দেশ
স্বীকৃতি দেয় না। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলো হলো
চিলি,পেরু,ব্রাজিল,ইকুয়েডর,গায়ানা ইত্যাদি দেশ। বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনকে
সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সমর্থন দিয়েছে।
মন্তব্যঃ ফিলিস্তিন নিয়ে কিছু কথা
ফিলিস্তিনকে আমাদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। বিশ্বের
প্রতিটি দেশ যখন ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিবে রাষ্ট্র হিসেবে ঠিক তখনই ফিলিস্তিনি
জনগণের এই দুর্দশা নিরসনে সাহস পাবে।শান্ত একটি দেশকে অশান্ত করে তোলার এই ভয়ংকর খেলা কোটি কোটি মানুষের প্রাণ
নিয়ে নিচ্ছে।
বিশ্বের সব দেশকে বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে একত্র হয়ে এর প্রতিরোধ করা
উচিত। শুধু ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ না থেকে এই সমস্যার পুরোপুরি
সমাধানে বিশ্বের সব দেশগুলোকে একত্র হওয়া উচিত। এবং যেসব রাষ্ট্র এ সমস্যা আরো
বাড়াতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url