জুডিশিয়াল রিভিউ, রীট পিটিশন,জনস্বার্থে মামলা
জুডিশিয়াল রিভিউ
জুডিশিয়াল রিভিউ বা বিচারিক পর্যালোচনাঃ
জুডিশিয়াল রিভিউ কাকে বলেঃ
বিচার বিভাগ যে ক্ষমতাবলে সংসদে প্রনীত আইনের সাথে সংবিধানের
সামঞ্জস্যতার সঠিকতা যাচাই করতে পারে বা যতটুকু অমিল রয়েছে তত টুকু কে বাতিল বলে ঘোষণা
করতে পারে সেই ক্ষমতা কে জুডিশিয়াল রিভিউ বলে।
বাংলাদেশে জুডিশিয়াল রিভিউঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(২) ,২৬ এবং ১০২(২) এ জুডিশিয়াল রিভিউ সম্পর্কে বলা
হয়েছে।
অনু-৭(২)ঃ “জনগণের অভিপ্রায়ে পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান
প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হয়,তাহা হইলে
সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে। ”
অনু-২৬ঃ (১) “এই ভাগের বিধানাবলির সহিত অসমঞ্জস্য সকল প্রচলিত
আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল
হইয়া যাইবে। ”
(২) “রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস্য কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি আসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে । ”
বাংলাদেশের আইনে সংবিধান কে চূড়ান্ত আইন হিসেবে ধরা হয় । কাজেই
শাসন বিভাগ,আইন বিভাগ,আইন বিভাগ সহ অন্য যে কোন বিভাগ এমন কোন কাজ করতে পারবে যা সংবিধান কে লংঘন করে ।
সংবিধানের এই ক্ষমতা ব্যবহারের এখতিয়ার রাখেন সুপ্রিম কোর্ট । এই কারনে সুপ্রিম কোর্ট
হলেন সংবিধানের অভিভাবক। সুপ্রিম কোর্ট এর এই ক্ষমতা কে বলে Power Of Judicial
Review ।
এই ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন
করে এরূপ আইন বাতিল ঘোষণা করেন।
সংবিধানের বাতিলকৃত সংশোধোনীসমূহঃ
বাংলাদেশ সংবধিান ২০২৩ সাল র্পযন্ত
মোট ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশর সুপ্রীমকোর্ট তার Power Of Judicial Review প্রয়োগ করে সংবিধানের ৫ টি সংশোধনী কে অবৈধ এবং বাতিল ঘোষনা
করেছে-
(১) পঞ্চম সংশোধনী আইন,১৯৭৯
(২) সপ্তম সংশোধনী আইন,১৯৮৬
(৩) অষ্টম সংশোধনী আইন,১৯৮৮
(৪) ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন,১৯৯৬
(৫) ষোড়শ সংশোধনী আইন,২০১৪
জুডিশিয়াল রিভিউ প্রয়োগ এর ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতাঃ
·
গণপ্রজতন্ত্রী
বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের
পরিবর্তন এর কথা, এই ক্ষেত্রে বিচারিক পর্যালোচনা প্রযোজ্য নয় ।
· গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭,১০২(৫) অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিষয়াদির ক্ষেত্রে বিচারিক পর্যালোচনা প্রযোজ্য নয় ।
বিচারবিভাগীয়
পর্যালোচনার তাৎপর্যঃ
১) জুডিশিয়াল রিভিউ সংসদে পাশকৃত আইন কে
বৈধতা দেয় ।
২) জুডিশিয়াল রিভিউ সংসদের ‘সংশোধনী’ ক্ষমতা’
এবং ‘সাংবিধানিক ক্ষমতা’-র মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ
করে।
৩) যখন কোন আইনকে পজিটিভ ও নেগেটিভ দুই ভাবেই
ব্যাখা করা যায় সেক্ষেত্রে আদালত জুডিশিয়াল রিভিউ এর মাধ্যমে ইতিবাচক ব্যাখা টি প্রয়োগ
করে ।
৪) যখন কোন আইনের সাংবিধানিক সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে , তখন জুডিশিয়াল রিভিউ এর মাধ্যমে তা যাচাই করা হয় ।
রীট পিটিশনঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের সংবিধানের অনু-(২৭-৪৭) পর্যন্ত বর্ণিত মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে উক্ত সংবিধানের
১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে যে মামলা করা যায় তাই রীট ।
সংবিধানের সরাসরি রীট এর উল্লেখ না থাকলেও অনু-১০২(২) তে ৫ ধরনের
রীট এর কথা বলা হয়েছে । বাংলাদেশের সংবিধানের
১০২ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগকে রীট এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে ।
রীটের প্রকারভেদঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১০২(২) তে ৫ ধরনের রীটের কথা বলা হয়েছে । যথাঃ
(১) Writ of
Prohibition (নিষেধাজ্ঞা মূলক রীট)
(২) Writ of Mandamus (আদেশসূচক রীট)
(৩) Writ of Certiorari (উৎপ্রেষণ মূলক রীট)
(৪) Writ of Habeas Corpus (বন্দী প্রদর্শন রীট)
(৫) Writ of Quo Warranto (কারণ দর্শানো রীট)
১) নিষেধাজ্ঞামূলক রীটঃ সংবিধানের অনু- ১০২(২)(ক)(অ)
অনুসারে যেক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি তার এখতিয়ার এর বাহিরে
কোন কাজ করতে উদ্যত হয়েছে কিংবা স্বাভাবিক ন্যায়নীতি ভঙ্গ করতে যাচ্ছে তখন তাকে সেই
কাজ করতে আদালত নিষেধ করে ,একে নিষেধাজ্ঞা মূলক রীট বলে ।
২) পরমাদেশ বা হুকুমজারিঃ সংবিধানের অনু- ১০২(২)(ক)(অ)
অনুসারে যেক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি তার আইনগত দ্বায়িত্ব
পালন করতে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে আদালত তাকে সেই কাজ করতে আদেশ দেয় , একে পরমাদেশ
রীট বলে ।
৩) উৎপ্রেষণ মূলক রীটঃ কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষ আইন গত অধিকার নেই অথবা বে-আইনী কোন কাজ করে ,আদালত তখন সেই কাজ টি
অবৈধ বলে ঘোষণা দিতে পারে, একে উৎপ্রেষণ রীট বলে ।
৪) বন্দী প্রদর্শন রীটঃ আইনগত অধিকার ব্যতিরেকে
বা বে-আইনীভাবে কোন ব্যক্তিকে আটক করলে আদালত তাকে হাজির করার জন্যে আদেশ দেয়, একে
বন্দী প্রদর্শন রীট বলে ।
৫) কারন দর্শানো রীটঃ কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন সরকারী পদ দাবি করে যা অবৈধ বা অবৈধভাবে কোন পদ দখল করে তাহলে আদালত তাকে উক্ত পদ দখলের কারন দর্শাতে বলে, একে কারন দর্শানো রীট বলে ।
Public Interest Litigation (জনস্বার্থে মামলা):
(১)
জনগুরুত্ব সম্পর্কীয় মামলা (Public Importance Litigation)
(২)
বহুসংখ্যক লোকের একক স্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা (Representative Suit or Litigation)
(৩) জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা (Public Interest Litigation)
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url