জুডিশিয়াল রিভিউ, রীট পিটিশন,জনস্বার্থে মামলা

জুডিশিয়াল রিভিউ,রীট পিটিশন,ও জনস্বার্থে মামলা একে অপরের সাথে খুব কাছাকাছি সম্পর্কযূক্ত।কারন এই তিনটি বিষয়ই জনস্বার্থ সম্পর্কিত এবং তিনটি বিষয়ই হাইকোর্ট এর সাথে সম্পর্কিত।জুডিশিয়াল রিভিউ,
জুডিশিয়াল-রিভিউ,-রীট পিটিশন-জনস্বার্থে-মামলা
রীট পিটিশন ও জনস্বার্থে মামলা সংবিধানের জরুরি বিষয়াবলী।এই তিনটি বিষয়ে কথা বলা হয়েছে মানুষের অধিকার নিয়ে।এবং তিনটি বিষয়ই মানুষের মৌলিক অধিকার অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করে।জেনে নেওয়া যাক জুডিশিয়াল রিভিউ,রীট পিটিশন ও জনস্বার্থে মামলা সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃজুডিশিয়াল রিভিউ,রীট পিটিশন, জনস্বার্থে মামলা

জুডিশিয়াল রিভিউ বা বিচারিক পর্যালোচনা

বিচার বিভাগ যে ক্ষমতাবলে সংসদে প্রনীত আইনের সাথে সংবিধানের সামঞ্জস্যতার সঠিকতা যাচাই করতে পারে বা যতটুকু অমিল রয়েছে তত টুকু কে বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে সেই ক্ষমতা কে জুডিশিয়াল রিভিউ বলে।

জুডিশিয়াল রিভিউ বা বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট এমন সকল আইন বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে যে সকল আইন সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(২),২৬ এবং ১০২(২) এ  জুডিশিয়াল রিভিউ সম্পর্কে বলা হয়েছে

অনু-৭(২)ঃ “জনগণের অভিপ্রায়ে পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হয়,তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।”

অনু-২৬ঃ (১) “এই ভাগের বিধানাবলির সহিত অসমঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে। ”(২) “রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত  অসমঞ্জস্য কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না

এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি আসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে ।”বাংলাদেশের আইনে সংবিধান কে চূড়ান্ত আইন হিসেবে ধরা হয় । কাজেই শাসন বিভাগ,আইন বিভাগ,আইন বিভাগ সহ অন্য যে কোন বিভাগ,

এমন কোন কাজ করতে পারবে যা সংবিধান কে লংঘন করে । সংবিধানের এই ক্ষমতা ব্যবহারের এখতিয়ার রাখেন সুপ্রিম কোর্ট । এই কারনে সুপ্রিম কোর্ট হলেন সংবিধানের অভিভাবক। সুপ্রিম কোর্ট এর এই ক্ষমতা কে বলে পাওয়ার অফ জুডিশিয়াল রিভিউ
এই ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে এরূপ আইন বাতিল ঘোষণা করেন।বাংলাদেশ সংবধিান ২০২৩ সাল র্পযন্ত মোট ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশর সুপ্রীমকোর্ট তার পাওয়ার অফ জুডিশিয়াল রিভিউ প্রয়োগ করে সংবিধানের ৫ টি সংশোধনী কে অবৈধ এবং বাতিল ঘোষনা করেছে-
  • পঞ্চম সংশোধনী আইন,১৯৭৯
  • সপ্তম সংশোধনী আইন,১৯৮৬
  • অষ্টম সংশোধনী আইন,১৯৮৮
  • ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন,১৯৯৬
  • ষোড়শ সংশোধনী আইন,২০১৪

জুডিশিয়াল রিভিউ প্রয়োগ এর ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা

গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন এর কথা, এই ক্ষেত্রে বিচারিক পর্যালোচনা প্রযোজ্য নয় ।গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭,১০২(৫) অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিষয়াদির ক্ষেত্রে বিচারিক পর্যালোচনা প্রযোজ্য নয়।

সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পর্কে।এবং সংবিধানের ৩৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তিঅপরাধের দায়যুক্ত কার্য সংগঠন করে বলবৎ ছিল এইরূপ আইন ভঙ্গ করার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
জুডিশিয়াল-রিভিউ,-রীট পিটিশন-জনস্বার্থে-মামলা
এবং ৩৫(৩) অনুচ্ছেদে  বলা হয়েছে যে ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত তাকে স্বাধীন নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকার দিতে হবে।কিন্তু সংবিধানের ৪৭ক (২) অনুচ্ছেদের অধীন মানবেরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, ও আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল রিভিউ প্রযোজ্য হবে না।

জুডিশিয়াল রিভিউ প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এটি একটি সীমাবদ্ধতা।একইভাবে কোন নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে যেই আইন প্রচলিত সেই আইন অনুযায়ী ওই বাহিনী পরিচালিত হবে। সেই ক্ষেত্রে তাদের মৌলিক অধিকার যদি ক্ষুন্ন হয় ও তবুও হাইকোর্ট বিভাগ সেই ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। 

বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার তাৎপর্য

বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বা জুডিশিয়াল রিভিউ  বাংলাদেশের আইনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার রাখে। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বা জুডিশিয়াল রিভিউ যেকোনো আইন বাজে কারো অধিকার কে বৈধতা প্রদান করে থাকে জুডিশিয়াল ডিভিউ এর তাৎপর্য সমূহ হলো-
  • জুডিশিয়াল রিভিউ সংসদে পাশকৃত আইন কে বৈধতা দেয় ।
  • জুডিশিয়াল রিভিউ সংসদের ‘সংশোধনী’ ক্ষমতা  এবং ‘সাংবিধানিক ক্ষমতা’-র মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে।
  • যখন কোন আইনকে পজিটিভ ও নেগেটিভ দুই ভাবেই ব্যাখা করা যায় সেক্ষেত্রে আদালত জুডিশিয়াল রিভিউ এর মাধ্যমে ইতিবাচক ব্যাখা টি প্রয়োগ  করে ।
  • যখন কোন আইনের সাংবিধানিক সঠিকতা  নিয়ে প্রশ্ন উঠে , তখন জুডিশিয়াল  রিভিউ এর মাধ্যমে তা যাচাই করা হয় ।

উক্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে  জুডিশিয়াল রিভিউ ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

রীট পিটিশন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনু-(২৭-৪৪) পর্যন্ত বর্ণিত মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে উক্ত সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে যে মামলা করা যায় তাই রীট।সংবিধানের সরাসরি রীট এর উল্লেখ না থাকলেও অনু-১০২(২) তে ৫ ধরনের রীট এর কথা বলা হয়েছে।বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগকে রী এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগকে রীট মামলা সংক্রান্ত সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। সেই ক্ষমতা বলে হাইকোর্ট বিভাগ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগে যথার্থতার স্বার্থে বিচার কার্য পরিচালনা করবেন। হাইকোর্ট বিভাগ ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন ক্ষমতা প্রয়োগে ইকুইটি দ্বারা পরিচালিত হতে পারবেন না।

রীটের প্রকারভেদ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১০২(২) তে ৫ ধরনের রীটের কথা বলা হয়েছে । যথা-

  • নিষেধাজ্ঞা মূলক রীট
  • আদেশসূচক রীট
  • উৎপ্রেষণ মূলক রীট
  • বন্দী প্রদর্শন রীট
  • কারণ দর্শানো রীট

নিষেধাজ্ঞামূলক রীটঃ সংবিধানের অনু- ১০২(২)(ক)(অ) অনুসারে যেক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি তার এখতিয়ার এর বাহিরে কোন কাজ করতে উদ্যত হয়েছে কিংবা স্বাভাবিক ন্যায়নীতি ভঙ্গ করতে যাচ্ছে তখন তাকে সেই কাজ করতে আদালত নিষেধ করে ,একে নিষেধাজ্ঞা মূলক রীট বলে। নিষেধাজ্ঞা মূলক রীট তদারকিমূলক বলা যায়। কেননা নিষেধাজ্ঞামূলক রীটের মাধ্যমে কোন সরকারি কর্তৃপক্ষ বা তার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি তার এখতিয়ার বহির্ভূত কোন কাজ করলে সেটিকে নিষেধ করা যায়।যেসব প্রেক্ষাপটে নিষেধাজ্ঞামূলক রীট জারি করা হয়-

  • সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত কোন ব্যক্তি নিজ ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও যদি ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।
  • সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত কোন ব্যক্তি ন্যায় বিচার সমূহের বিপরীত কোন কাজ করে থাকে।
  • সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত কোন ব্যক্তি অসংবিধানিক বা আইনবিরোধী কোনো কাজ করে থাকে।
  • সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত কোন ব্যক্তি প্রচলিত ও বিধিবদ্ধ আইনের পরিপন্থী কোন কাজ করে থাকে।
  • সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত কোন ব্যক্তি মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করে এমন কোন কাজ করে থাকে। 

পরমাদেশ বা হুকুমজারিঃ সংবিধানের অনু- ১০২(২)(ক)(অ) অনুসারে যেক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি তার আইনগত দ্বায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে আদালত তাকে সেই কাজ করতে আদেশ দেয়,একে পরমাদেশ রীট বলে।পরমাদেশ বা হুকুম জারির রীট প্রয়োগ করা যায় সরকারি কাজের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ উচ্চআদালতে  যদি কোন ব্যক্তি এই রীট মামলা করে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির আইনগত অধিকার সুস্পষ্ট উপস্থিত থাকতে হবে।সেজন্য কোন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পরমাদেশ বা হুকুমজারির রীট প্রয়োগ করা যায় না।

উৎপ্রেষণ মূলক রীটঃ কোন সরকারী কর্মকর্তা  বা কর্তৃপক্ষ আইন গত অধিকার নেই  অথবা বে-আইনী কোন কাজ করে ,আদালত তখন সেই কাজ টি অবৈধ বলে ঘোষণা দিতে পারে, একে উৎপ্রেষণ রীট বলে।যদি কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তৎসংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে ফেলে যা অসংবিধানিক বেআইনি অথবা বিধিবদ্ধ আইনে যা সমর্থন করে না তখন উৎপ্রেষণ মূলক রীট দায়ের করা যায়।যেসব প্রেক্ষাপটে উৎপ্রেষণমূলক রীট জারি করা যায়-

  • কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তৎসংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে।
  • কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তৎসংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি তার ক্ষমতা বহির্ভূত কোনো কাজ করে থাকে।
  • কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তৎসংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার লংঘন করে থাকে।

বন্দী প্রদর্শন রীটঃ আইনগত অধিকার ব্যতিরেকে বা বে-আইনীভাবে কোন ব্যক্তিকে আটক করলে আদালত তাকে হাজির করার জন্যে আদেশ দেয়, একে বন্দী প্রদর্শন রীট বলে। এই রীটের মাধ্যমে অন্যায় ভাবে কাউকে আটক করা হলে আটককৃত ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আদালতের সামনে উপস্থিত করানো হয়।কোন ব্যক্তিকে আটক করে রাখার  কোন আইনসঙ্গত কারণ সত্যিই আছে কিনা তা বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এই রীটের মাধ্যমে। যেসব প্রেক্ষাপটে বন্দী প্রদর্শন রীট জারি করা হয়- 

  • কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটকাদেশটি প্রাথমিক দৃষ্টিতে অবৈধ কিনা।
  • কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটকাদেশটি সাংবিধানিক কোনো বিধান লঙ্ঘন করেছে কিনা।
  • কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটকাদেশটি তার ক্ষমতার ভেতরে থেকে করেছে কিনা।

কারন দর্শানো রীটঃ কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন সরকারী পদ দাবি করে যা অবৈধ বা অবৈধভাবে কোন পদ দখল করে তাহলে আদালত তাকে উক্ত পদ দখলের কারন দর্শাতে বলে, একে কারন দর্শানো রীট বলে।কারণ দর্শানোর রীটের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পালন করতে হয়।সেই শর্ত সমূহ হলো-

  • যে কর্তৃপক্ষ বা অফিস অথবা  যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে রীট করা হয়েছে সেই কর্তৃপক্ষ বা অফিস অথবা ব্যক্তি সরকারি।
  • উক্ত কর্তৃপক্ষ বা অফিস বিধিবদ্ধ আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত।
  • যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে পদের জন্য রীট করা হয়েছে সেই ব্যক্তিকে উক্ত পথ দখলের জন্য অযোগ্য।

রীট দায়ের করার উপযুক্ত ব্যক্তি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২(২) অনুচ্ছেদে রীট দায়ের করার উপযুক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে।উক্ত অনুচ্ছেদ এর (খ)(অ)(আ),এবং (ক)(অ)(আ)  পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ধরনের ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।তার মধ্যে দুই প্রকারের রীট যে কোন ব্যক্তি দায়ের করতে পারবে।
  • বন্দী প্রদর্শন রীট যে কেউ দায়ের করতে পারবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ এর খ এর অ অনুযায়ী।
  • কারণ দর্শাও  রীট যে কেউ দায়ের করতে পারবে উক্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ এর খ এর আ অনুযায়ী।
এবং ৩ প্রকার রীট সাধারনত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ব্যতীত যেকোনো ব্যক্তি দায়ের করতে পারবে না। সেই রীট সমূহ হলো-

  • নিষেধাজ্ঞামূলক রীট যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের ক এর অ বর্ণিত রয়েছে,এটি  সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়া যে কেউ দায়ের করতে পারবে না।
  • উক্ত সংবিধানের একই অনুচ্ছেদ এর ক এর অ অনুযায়ী  পরমাদেশ রীট সংক্ষিপ্ত ব্যক্তি ছাড়া যে কেউ দায়ের করতে পারবেনা।
  • বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ এর ক এর আ অনুসারে  উৎপ্রেষণমূলক রীট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ছাড়া যে কেউ দায়ের করতে পারবে না।
অনুচ্ছেদটিতে বার বার যে শব্দটি আসছে সেটি হচ্ছে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি।এবার জেনে নেওয়া যাক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কে।

সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশেরে সংবিধানে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সংজ্ঞা সরাসরি প্রদান করা হয়নি। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পদটির উল্লেখ সর্বপ্রথম করা হয়েছিল কাজী মোখলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ মামলায়।সেই মামলাটিতে  সুপ্রিম কোর্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৬ নাম্বার অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা করে,

আরো পড়ুনঃ জান্নাতের বর্ণনা ও প্রকারভেদ

মোখলেসুর রহমানকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে  স্বীকৃতি দান করেন।বিখ্যাত একটি মামলা মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ, এই মামলাটিতে আদালত বলেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কথাটি শুধু ব্যক্তিগতভাবে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বোঝায় না বরং এটা জোট বদ্ধ বা সমষ্টিগত ব্যক্তিকেও বুঝায়।


এ দুটি মামলা থেকে এ বিষয়ে  স্পষ্ট যে যেকোনো সাধারণ জনগণ স্বার্থলম্বিত হলে সাধারণ জনগণের মধ্যে যে  কোন ব্যক্তি রীট মামলা করতে পারেন। যে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘিত না হলেও যদি অন্য কোন সাধারণ মানুষের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয় তাহলে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াই হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলা করতে পারবেন।


যাদের বিরুদ্ধে রীট কার্যকর নয়


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন সম্পর্কে। অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে কোন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সম্পর্কিত কোন শৃঙ্খলা মূলক আইনের যেকোনো বিধান উক্ত সদস্যদের যথাযথ কর্তব্য পালন বা উক্ত বাহিনীতে শৃঙ্খলা রক্ষা নিশ্চিত করবার উদ্দেশ্যপ্রণীত বিধান বলে অনুরূপ বিধানের ক্ষেত্রে,

জুডিশিয়াল-রিভিউ,-রীট পিটিশন-জনস্বার্থে-মামলা

এই ভাগের কোন কিছুই প্রযোজ্য হবে না।অর্থাৎ এই অনুচ্ছেদ অনুসারে স্থল,নৌ বা বিমান বাহিনী,পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে রীট মামলা চলেনা।তবে সামরিক আদালত বা ট্রাইবুনাল কর্তৃক দেওয়া সিদ্ধান্ত ব্যতীত সামরিক কর্তৃপক্ষের অন্যান্য যেকোনো আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত ব্যক্তি উচ্চ আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারেন।

জনস্বার্থে মামলা 

বাংলাদেশের দরিদ্র নিরক্ষর সুবিধা বঞ্চিত মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য জনস্বার্থে মামলা করা হয়ে থাকেবাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রকৃতি অনুযায়ী যে ব্যক্তি তার অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতের কাছে যেতে হবে কিন্তু এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলো জনস্বার্থ মামলা জনস্বার্থ মামলা কে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়,যথা-

  • জনগুরুত্ব সম্পর্কীয় মামলা
  • বহুসংখ্যক লোকের একক স্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা
  • জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা 
জনগুরুত্ব সম্পর্কীয় মামলাঃ জন গুরুত্ব সম্পর্কে মামলা বলতে এরূপ মামলা বোঝায়, যে মামলায় যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হবে তার স্বার্থ একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে।

বহুসংখ্যক লোকের একক স্বার্থ সম্পর্কীয় মামলাঃ বহু সংখ্যক লোকের একক স্বার্থ সম্পর্কে ও মামলা বলতে বোঝায়, যে মামলাটির স্বার্থ হবে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর  স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ কোন একটি দেশের সকল জনগণ নয় বরং নির্দিষ্ট কিছু জনগণের জন্য যে মামলা করা হবে সেটি বহু সংখ্যক লোকের একক স্বার্থ সম্পর্কে ও মামলা হিসেবে পরিগণিত হবে।

জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলাঃ জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা বলতে বোঝায় যে মামলায়  একটি রাষ্ট্রের সব মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট থাকবে। অর্থাৎ জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলায় যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে সেই সিদ্ধান্তটির ইতিবাচক দিকটি দেশের সকল জনগণ ভোগ করবে।

জনস্বার্থে মামলার শর্তসমূহ

জনস্বার্থে মামলা করতে হলে যে যে বিষয়গুলো অবশ্যই করতে হবে তা হলো-

  • যে বিষয়ের উপর মামলা করা হবে সেই বিষয়টি জনসাধারণকে প্রভাবিত  করে এমন হতে হবে।
  • যে বিষয়ে মামলা করা হবে সেই বিষয়টির সমস্যা একটি দুর্বল জনগোষ্ঠীর সাথে জড়িত হতে হবে।
  • যে বিষয়ে মামলা করা হবে সেই বিষয়টি যে সমস্যা উত্থাপন করে তা একটি রাষ্ট্রের সমগ্র জনগণের বিবেককে জাগ্রত করে এমন হতে হবে।
  • যে বিষয়ে মামলা করা হবে সে বিষয়টি জনসাধারণের ক্ষতিসাধনের কারণ হতে হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলি যদি  স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়  তবেই জনস্বার্থে মামলা করা যাবে।

মন্তব্যঃ জুডিশিয়াল রিভিউ, রীট পিটিশন,জনস্বার্থে মামলা

জুডিশিয়াল রিভিউ,রীট পিটিশন ও জনস্বার্থে মামলা প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। জুডিশিয়াল রিভিউ যেমন জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে ও আইন গুলোকে বৈধতার প্রদান করে এবং অবৈধ আইন বাতিল করে তেমনি রীট পিটিশন দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।


অপরদিকে জনস্বার্থে মামলা জনগণের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করে। উপরোক্ত তিনটি বিষয়ই  সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে নিজ নিজ  অবস্থানে কাজ করে। একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে জুডিশিয়াল রিভিউ, রীট পিটিশন ও জনস্বার্থে মামলা সমান্তরাল ভূমিকা পালন করে।


সুপ্রিমকোর্ট হলেন সংবিধানের অভিভাবক। তাই সুপ্রিম কোর্ট জুডিশিয়াল রিভিউ,।রীট পিটিশন ও জনস্বার্থে মামলার বিষয়গুলিতে হস্তান্তর করেন। এবং জনগণকে তার হারিয়ে যাওয়া অধিকার ফিরিয়ে দেন। এবং তার মৌলিক অধিকার রক্ষা করেন। যে কোন আইনকে বৈধতার প্রদান করেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url