ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম ও ফ্রিজের যত্ন
দিন যত যাচ্ছে যুগ ততই উন্নত হচ্ছে। আগের দিনে মানুষ খাবার সংরক্ষন করার কৃত্রিম
তেমন কোন উপায় জানত না। কিন্তু বর্তমানে খাবার সংরক্ষনের জন্য রেফ্রিজারেটর এর
তুলনা নেই। বাজারে আজ কাল নতুন সব ডিজাইন ও আলাদা আলাদ সুবিধার নতুন রূপ নিয়ে
রেফ্রিজারেটর গুলোর আগমন হচ্ছে। সামনে ঈদ আসছে। এই ঈদুল ফিতর এর ওপর আসবে ঈদুল
আজহাহ অর্থাৎ কুরবানি ঈদ।
দুটো ঈদ এই ফ্রিজের প্রয়োজন হবে ঘরে ঘরে। কিন্তু এই ফ্রিজে কোন খাবার কিভাবে
সংগ্রহ করব এবং ফ্রিজের যত্ন ই বা কিভাবে নেবো তা অনেকেই জানে না। অনেকে আবার
সচেতন ও নন। তাই এই ফ্রিজে খাবার সংগ্রহের পদ্ধতি ও ফ্রিজের যত্ন নিয়ে আজকের
আয়োজন। চলুন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম ও ফ্রিজের যত্ন
- ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম ও ফ্রিজের যত্ন
- ফ্রিজে কাঁচা মাংস সংরক্ষণের নিয়ম
- ফ্রিজে কাঁচা মাছ সংরক্ষণের নিয়ম
- ফ্রিজে কাঁচা সবজি সংরক্ষণের নিয়ম
- ফ্রিজে শাকপাতা সংরক্ষণের নিয়ম
- ফ্রিজে বাটা মশলা সংরক্ষণের নিয়ম
- ফ্রিজে রান্না করা খাবার সংরক্ষণের নিয়ম
- ফ্রিজের যত্ন নেওয়ার উপায়
- যে কারণে ফ্রিজের যত্ন নেওয়া জরুরী
- ফ্রিজে দুর্গন্ধ হলে করণীয়
- মন্তব্যঃ ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম ও ফ্রিজের যত্ন
ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম ও ফ্রিজের যত্ন
আজকাল সাধারণ ফিজারের পাশাপাশি প্রত্যেকটি বাড়িতে ডিপ ফ্রিজ ও রয়েছে। ফ্রিজ
বাসায় থাকা কে মনে করা হতো বিলাসিতার কারণ। কিন্তু দিন পরিবর্তন এর সাথে
মানুষের এটি প্রয়োজনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে গিয়ে যখন যা খেতে ইচ্ছে
করে বেশি করে কিনে নিয়ে এসে,
সেটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার একটি অন্যতম মাধ্যম হলো ফ্রিজ। সাধারণ ফ্রিজের
মানুষের সীমাবদ্ধ নেই এখন বাসায় বাসায় ডিপ ফ্রিজও রয়েছে। কেননা সাধারণ
ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ পর্যাপ্ত পরিমাণ না হওয়ার কারণে ডিপ ফ্রিজের চাহিদা
বেড়েছে।
আরও পড়ুনঃ ঈদে ফ্যাশন হিসেবে নানা রকম জামা
এই ফ্রিজগুলোতে কিভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করবেন সেটি না জানা থাকলে সেই খাদ্য
গ্রহণ করা বিষ গ্রহণ করার সমতুল্য হতে পারে। অর্থাৎ সঠিক পদ্ধতিতে ফ্রিজে খাবার
সংরক্ষণ না করলে সেই খাদ্য গ্রহণ আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে এবং পরিশেষে
মৃত্যু ঘটাতে পারে।
তার পাশাপাশি ফ্রিজারগুলোর যত্ন নেওয়া খুব জরুরী। কেননা এগুলো নিয়মিত ও সঠিক
পদ্ধতিতে যত্ন না নিলে যান্ত্রিক জিনিস হিসেবে সেটি অকেজো হয়ে যেতে পারে। খুব
সাবধানতার সাথে তাই ফ্রিজ গুলোর আমাদের যত্ন নেওয়া এবং ফ্রিজে কিভাবে খাবার
সংরক্ষণ করবেন তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে আমরা দূষিত খাদ্য থেকে রেহাই পাব এবং অর্থ দিয়ে কেনা
ফ্রিজার এর যত্ন ও নিতে পারব। তার পাশাপাশি রেফ্রিজারেটর এর বিষয়গুলোতে নিজেকে
আপডেট রাখতে পারব। যারা ফ্রিজ আরের যত্ন ও এতে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম সম্পর্কে
সচেতন নয় তাদের অবশ্যই সচেতন হওয়া দরকার। কেননা সচেতন হওয়ার মাধ্যমেই আমাদের
প্রাণ ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।
ফ্রিজে কাঁচা মাংস সংরক্ষণের নিয়ম
আমরা সবাই ফ্রিজে কাঁচা মাংস সংরক্ষণের পূর্বে কাঁচা মাংসটিতে থাকা রক্ত ধুয়ে
নিন। এবং কাঁচামাল সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর ফ্রিজে সংরক্ষণ করি। কিন্তু
এই পদ্ধতি ত্যাগ করতে হবে। যেকোনো কাঁচা মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করার পূর্বে
সেটিকে ধোয়া চলবে না।
এটিকে রক্ত সহ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। কেননা মাংস ধোয়ার ফলে রান্নাঘরের
বিভিন্ন জায়গায় জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রিজে
কাঁচা মাংস সংরক্ষণের পূর্ণাঙ্গ নিয়ম সম্পর্কে।
- অনেকে ফ্রিজে যেকোনো পশু পাখির মাংস সংরক্ষণ করতে চান।পশু-পাখির মাংস সংরক্ষণ করার উপায় হলো এটি সংরক্ষণ করার পূর্বে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। বাসায় থাকা যেকোনো ঝাঝরিতে মাংসটি রেখে এর ভেতরে থাকা পানিগুলো ঝরিয়ে নিন।
- প্লাস্টিক ব্যাগ ও এয়ারটাইট কন্টেইনার ব্যবহারের মাধ্যমে সেই মাংসগুলো ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন।
- ফ্রিজের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে রেখে মাংস সংরক্ষণ করুন।
- মাংসটি তিন মাসের মধ্যেই খেয়ে নিন। কেননা তিন মাস পার হবার পর যতদিন যাবে মাংসের গুণগত মান ততই কমবে।
- মাংস হঠাৎ গরম পানিতে দিবেন না। এটি ব্যবহার করার আগে ধীরে ধীরে ডিফ্রষ্ট করুন।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি ফ্রিজে কাঁচা মাংস সংরক্ষণ করতে
পারেন। এটি আপনাকে দিতে পারে স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য এবং খাদ্যের স্বাদ ও গুণগত
মানসহ একটি খাদ্য।
তাই ফ্রিজে কাঁচা মাংস সংরক্ষণের পূর্বে এই নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। এবং ফ্রিজে
কাঁচা মাংস সংরক্ষণের মাধ্যমে নিজে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখুন।
ফ্রিজে কাঁচা মাছ সংরক্ষণের নিয়ম
কাঁচা মাংসের পাশাপাশি ফ্রিজে কাঁচা মাছও সংরক্ষণ করা হয়। মাছে ভাতে বাঙালির
কাছে মাছ প্রতি পাতে না থাকলে খাবার যেন জমে না। বাঙালির মাছ কেনার পরিমাণ টাই
বেশি হয়। এবং সেটি ফ্রিজের সংরক্ষণ রাখা ও বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।এই মাছ সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে মাছের গুণগত মান যেমন কমে যাবে,
ঠিক তেমনি এর সাধ ও কমে যাবে।পরিশেষে স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বঞ্চিত হতে হবে। মাছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে। এ আমিষ গ্রহণের জন্য ফ্রিজে কাঁচামাল সংরক্ষণের নিয়ম
সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানও থাকতে হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক ফ্রিজের কাঁচামাল
সংরক্ষণের নিয়ম সম্পর্কে।
- কাঁচা মাছ কিনে নিয়ে আসার পর এটি ফ্রিজে দ্রুত সংরক্ষণ করতে হবে।
- মাছটিকে কেটে ছোট করে নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- আর যদি মাছটি ছোট বা মাঝারি আকৃতির হয় তাহলে সেটা পুরোটাই সংরক্ষণ করতে হবে।
- প্লাস্টিক ব্যাগ বা এয়ার টাইট কন্টেইনারে করে মাছটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।
- ফ্রিজে ছোট মাছ সংরক্ষণ করতে চাইলে এতে লবণ মাখিয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে। এতে করে ফ্রিজে ছোট মাছ দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
- ফ্রিজে ছোট মাছ সংরক্ষণ করতে চাইলে সাদা ভিনেগার বা লেবুর রস ও হলুদ মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা যায়। এতে করে ছোট মাছ দীর্ঘ দিন ভালো থাকে।
ফ্রিজে কাঁচামাল সংরক্ষণের পদ্ধতি জানা তাই এত জরুরী।উপরের নিয়ম গুলো অনুসরণ করে
আমরা ফ্রিজে কাঁচামাছ সংরক্ষণ করতে পারি। এবং পরিশেষে নিজেদের সুস্থ রাখতে পারি
এবং আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে পারি।
ফ্রিজে কাঁচা সবজি সংরক্ষণের নিয়ম
মাছ মানুষের পাশাপাশি সবজি আমাদের খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সবজিতে রয়েছে নানা রকমের ভিটামিন লবণ সহ নানা রকমের পুষ্টিকর উপাদান। সবজি
ফ্রিজে কত দিন সংরক্ষণ করা যায় কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেই পদ্ধতি আমাদের
জেনে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
কেননা এই পদ্ধতি না জানা থাকলে আমরা সঠিক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারবো
না। এবং সঠিক পদ্ধতি না জানা থাকার কারণে আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ
করতে হতে পারে। এবার জেনে নেওয়া যাক ফ্রিজের কাঁচা সবজি সংরক্ষণের নিয়ম
সম্পর্কে।
- ফ্রিজে সবজি সংরক্ষণের পূর্বে সবজিকে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে এর গায়ে থাকা পানি শুকিয়ে নিতে হবে।
- কাগযে এ মুড়িয়ে নিয়ে সবজি জিপার ব্যাগ এ করে সংরক্ষণ করতে হবে।
- যেসব সবজি ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন নেই সেগুলো হলো টমেটো,বেগুন,শসা ইত্যাদি।
- ইয়ার টাইট ব্যাগের মাধ্যমে বাঁধাকপি,ফুলকপি,ক্যাপসিকাম এর মত সবজিগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
- ফ্রিজে কাঁচা মরিচ সংরক্ষণ করতে চাইলে এর বোঁটা ফেলে দিতে হবে। এবং যদি এটি টিস্যুতে মুড়িয়ে বক্সে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।
- যেসব সবজি ১ মাসের বেশি সংরক্ষণ করতে চান সেগুলো ৫ থেকে ৬ মিনিট সেদ্ধ করে নিন।এরপর এর গায়ে থাকা পানি শুকিয়ে জিপ ব্যাগে করে ডিপ ফ্রিজ এ সংরক্ষণ করুন।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি ফ্রিজে কাঁচা সবজি খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ
করতে পারবেন। এ পদ্ধতি বেশ কার্যকরী এবং উপকারী। গবেষণামূলক ভাবের কাঁচা সবজি
ফ্রিজে সংরক্ষণ করার উপায় এই পদ্ধতি। স্বাস্থ্যকর কাঁচা সবজি খেতে চাইলে
আমাদের এটি সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
ফ্রিজে শাকপাতা সংরক্ষণের নিয়ম
শাক পাতা আর সতেজতা খুব দ্রুতই হারিয়ে ফেলে। এবং শাকপাতা খুব দ্রুত শুকিয়ে
যায়। তাই শাক পাতা ফ্রিজে সংরক্ষণ করার জন্য খুব সচেতন থাকতে হয়। শাক পাতা
ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে চাইলে আপনি নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে
পারেন।
- ফ্রিজে শাক পাতা সংরক্ষণের পূর্বে এটি অবশ্যই পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এবং এতে থাকা পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
- শাক পাতা ফ্রিজে অধিক দিন সংরক্ষণ করতে চাইলে সেটিকে কাগজে মুড়িয়ে অথবা পাতলা কাপড়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিক ব্যাগে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।
- যদি ফ্রিজে স্প্রিং অনিয়ন বা পেঁয়াজকলি পুদিনা পাতা অথবা ধনেপাতা সংরক্ষণ করতে চান তাহলে আপনাকে কাচের বোতলে অল্প পানি দিয়ে সেটিকে রাখতে হবে।
- পালং শাক অথবা লাল শাক জাতীয় শাক দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে সেটি তিন থেকে চার মিনিট গরম পানিতে সেদ্ধ করে নিন। এরপর সেটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। করে দীর্ঘদিন এই শাক পাতা সংরক্ষণ করা যাবে।
- যে ব্যাগে করে শাক পাতা সংরক্ষণ করবেন সেই ব্যাকটি ছিদ্র করে দিন। এতে করে বাতাস চলাচলের মাধ্যমে শাক পাতা দ্রুত পচে যাবে না।
এই পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ফ্রিজে সাত পাতা সংরক্ষণ করতে পারেন
এবং সেটি পরবর্তীতে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
ফ্রিজে বাটা মশলা সংরক্ষণের নিয়ম
কেউ চাইলে ফ্রিজে বাটা মশলা সংরক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু সেজন্য এর সঠিক
পদ্ধতি জেনে রাখা খুবই জরুরী। কেননা সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে খাদ্য দূষিত
হতে পারে। এবং এটি আমাদের অসুস্থ করে তুলতে পারে। বাটা মসলা সাধারণত
তরিতরকারি রান্নার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে। ফ্রিজে করে বাটা মশলা
সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম জেনে নিন।
- আপনি যদি আদ,রসুন,পেয়াজ,মরিচ ইত্যাদি বেটে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে চান তাহলে এটি এয়ার টাইট কন্টেইনারে করে সংরক্ষণ করতে হবে।এভাবে আপনি এটি দুই দিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারবেন। তবে ডিপ ফ্রিজে যদি এটি সংরক্ষণ করেন তাহলে দুই মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন।
- বাটা মশলা সংরক্ষণের করতে চাইলে তেল দিয়ে হালকা এটি ভেজে নিয়ে সেটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে অনেক দিন ভালো থাকবে। এভাবেও সংরক্ষণ করতে পারবেন।
- আলাদা আলাদা কন্টেইনারে বাটা মশলা সংরক্ষণ করলে আপনি আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজন মতো এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
- ফ্রিজের সাথে থাকা বরফের ট্রেতে মসলা নিয়ে এটিই ছোট ছোট কিউব বানিয়ে সেটি সংরক্ষণ করতে পারবেন। এর সাথে লবণ ও তেল সামান্য পরিমাণে মিশিয়ে নিয়ে সেটি সংরক্ষণ করতে পারবেন।
বাটা মশলা সংরক্ষণের এই উপায় গুলো খুবই কার্যকরী।আপনি ফ্রিজে বাটা মসলা
সংরক্ষণ করতে চাইলে এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতে পারেন। এ পদ্ধতি অনুসরণের
মাধ্যমে মশলা সংরক্ষণ করলে সেটি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। এবং পরবর্তীতে এটি
খাদ্যের সাথে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করা যাবে।
ফ্রিজে রান্না করা খাবার সংরক্ষণের নিয়ম
ফ্রিজে মাছ মাংসের পরে সবচেয়ে যে জিনিসটি সংরক্ষণ করা হয় সেটি হচ্ছে
রান্না করা খাবার। অনেকেই ঘনঘন রান্না করার বিরক্তিকর বিষয় থেকে পরিত্রাণ
পেতে একসাথে অনেকগুলো রান্না করেন এবং সেটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে
প্রয়োজনমতো গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুনঃ বিকাশ পেমেন্টে ঈদের কেনাকাটা
যদিও টাটকা খাবার রান্না করে খাওয়াটাই স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
তারপরও যদি কেউ চাই রান্না করা খাবার সংরক্ষণ করতে তাহলে তাকে এটি সংরক্ষণের
সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ভাবে জানতে হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক ফ্রিজে
রান্না করা খাবার সংরক্ষণের নিয়ম সম্পর্কে।
- ফ্রিজে রান্না করা খাবার সংরক্ষণের পূর্বে এটি অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
- ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করার জন্য অবশ্যই প্লাস্টিকের বাক্স ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ প্লাস্টিকের বাক্সে খাবার সংরক্ষণ করলে সেই খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ক্যান্সার ছড়াতে পারে। তাই খাবার কে ছোট ছোট ভাগ করে এয়ারকন্টেনারে রাখতে হবে অথবা কাচের কন্টেইনারে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে পরিশেষে ফুডগ্রেট প্লাস্টিকের বাক্সতে সংরক্ষণ করতে হবে।
- ফ্রিজে রান্না করা খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে সেটি সাধারণ ফ্রিজে দুই থেকে তিন দিন সংরক্ষণ করা যায়। দুই থেকে তিন দিনের অধিক যদি ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করতে চান তাহলে সেটি ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে।
- ফ্রিজে যদি ভর্তা বা সালাতের মত খাবার সংরক্ষণ করতে চান তাহলে ভর্তা বা সালাতে কাঁচা পেঁয়াজ ব্যবহার করা যাবে না। ভর্তা তে কাঁচা পেঁয়াজের পরিবর্তে আপনাকে ভেজে নেওয়া পেঁয়াজ ব্যবহার করতে হবে। ওটাতে ভেজে নেওয়া পেঁয়াজ ব্যবহার করলেও সালাত সংরক্ষণে পেঁয়াজ ব্যবহার করা যাবে না। কেননা কাঁচা পেঁয়াজ খাবার খেয়ে দ্রুত নষ্ট করে দেয়।
- ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাবার যখন খেতে চাইবেন সেটি ফ্রিজ থেকে বের করার আগে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অর্থাৎ ঘরোয়া তাপমাত্রায় কিছুক্ষণ রেখে দিবেন। এরপর সেই খাবারটি গরম করে খেয়ে নিবেন।
এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি ফ্রিজে রান্না করা খাবার সংরক্ষণ
করতে পারেন। এবং খাবার সংরক্ষণ করার পর সেটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে গরম করে
সেই খাবার খেতে পারেন।
ফ্রিজের যত্ন নেওয়ার উপায়
আপনি যত ফ্রিজের যত্ন নিবেন তত ফ্রিজ দীর্ঘস্থায়িত্ব লাভ করবে। আমাদের উচিত
হবে প্রতি দুই থেকে তিন মাস পর পর ফ্রিজ বন্ধ করে সেটি পরিষ্কার করে
নেওয়া।ফ্রিজের ভেতরের অংশটি হালকা সাবান অথবা বেকিং সোডা ও পানি মিশ করিয়ে
নিয়ে ফ্রিজের ভেতরটি মুছে নিতে হবে। ফ্রিজের যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায়
সম্পর্কে এবার সম্পূর্ণভাবে জেনে নেওয়া যাক।
- যখন ফ্রিজের মধ্যে বেশি গরম জমে তখন এর ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমে যায় এবং খাবার নষ্ট হতে দেখা যায়। তাই বেশি বরফ জমলে সেটি ফ্রিজ বন্ধ করে বের করে ফেলে দিতে হবে।
- ফ্রিজের দরজা অযথা খোলা রাখবেন না কারণ ফ্রিজের দরজা খুলে রাখলে এতে আদ্রতা ঢুকে বরফ জমে যায় এবং ফ্রিজের সমস্যা দেখা যায়।
- অধিক বরফ জমে গেলে সেই ক্ষেত্রে আপনি ডিফ্রষ্ট মোড চালু করুন এবং বরফ গলিয়ে নিন।
- ফ্রিজের আদর্শ তাপমাত্রা হলো মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফ্রিজে সব সময় এই তাপমাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে ফ্রিজের কার্যকারিতা ঠিক থাকবে এবং খাবার সতেজ রাখবে।
- ফ্রিজের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী খাবার রাখতে হবে। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় যদি বেশি ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করা হয় তাহলে ফ্রিজে ঠান্ডা বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এর কারণে খাবার সমানভাবে ঠান্ডা হয় না যাতে করে খাবারের গুণগত মান নষ্ট হয়। সেজন্য ফ্রিজের ৮০ শতাংশ জায়গা পূর্ণ রাখতে পারবেন। এবং বাকি ২০ শতাংশ জায়গা খালি রাখবেন।
- ফ্রিজের দরজার রাবার সিলটি নষ্ট হয়ে গেছে কিনা সেটা খেয়াল রাখুন। কারণ সেটি নষ্ট হয়ে গেলে ফ্রিজের ঠান্ডা বাতাস বাইরে বেরিয়ে আসবে। এবং ফ্রিজ তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে। ফ্রিজের দরজার রাবার সিলটি ভালো রাখার জন্য এটি নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবেন।এটি নষ্ট হয়ে গেলে দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলতে হবে।
- ফ্রিজের পেছনের অংশে কয়েলের ধুলোবালি জমে গেছে কিনা সেটি খেয়াল রাখুন। এবং এটি অতিরিক্ত গরম হয়েছে কিনা সেই দিকেও খেয়াল রাখুন। ছয় মাস পর পর ফ্রিজের পেছনের কয়েলটি পরিষ্কার করুন।
- ফ্রিজের ভোল্টেজ ঠিক রাখার জন্য স্টাবিলাইজার ব্যবহার করতে হবে কেননা ফ্রিজারের ভোল্টেজ কম-বেশি হলে ফ্রিজের ক্ষতি করে।
- ফ্রিজের প্রতিটি যন্ত্রাংশ ঠিক মতো পরীক্ষা করে নিতে হবে।
এই নিয়মগুলো অনুসরণের মাধ্যমে একটি ফ্রিজের যত্ন নেওয়া যায়। এতে করে
ফ্রিজটি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং কার্যকারিতা পূর্বের মতোই থাকে। আপনার ফ্রিজের
যত্ন নিতে চাইলে উপরের পদ্ধতি গুলো খুব ভালোভাবে অনুসরণ করুন এবং আপনার
ফ্রিজকে দীর্ঘমেয়াদি করে তুলুন।
যে কারণে ফ্রিজের যত্ন নেওয়া জরুরী
ফ্রিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে এটি দীর্ঘমেয়াদী হয়। যতনে আর মাধ্যমে
অন্যান্য যন্ত্রাংশ গুলো ভালো থাকে। যদি ফ্রিজে ধুলাবালি জমে তাহলে ফ্রিজ তার
স্বাভাবিক কার্যকরী ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ বিল বেশি
ওঠে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা ১২ মাসের নাম ও ক্যালেন্ডার ২০২৫
যদি ফ্রিজের যত্ন নেওয়া হয় তাহলে ফ্রিজ তার স্বাভাবিক কার্যকরী ক্ষমতা বজায় রাখতে পারবে এবং বিদ্যুৎ
খরচ কম হবে। যদি ফ্রিজের যত্ন না না হয় তাহলে অপরিচ্ছন্নতার কারণে ফ্রিজে
ব্যাকটেরিয়া ও দুর্গন্ধ তৈরি হয়। এটি ফ্রিজের খাবারের গুণগত মান নষ্ট করে
এবং খাবারের স্বাদ কমিয়ে দেয়।
এই খাবার সতেজ এবং এর গুণগত মান সুরক্ষার জন্য ফ্রিজের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী।
আবার যদি ফ্রিজের সঠিকভাবে যত্ন না নেওয়া হয় তাহলে এর কুলিং সিস্টেম নষ্ট
হয়ে যায়। আর এটি মেরামত করতে হলে অনেক টাকা খরচ করতে হয়।
এই খরচ এড়াতে হলে ফ্রিজের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী। উপরোক্ত কারণ গুলোর জন্য
ফ্রিজের যত্ন নেওয়া এতটা জরুরী। ফ্রিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আমাদের বাড়ির
ফ্রিজ গুলো দীর্ঘ মেয়াদি করতে পারি।
ফ্রিজে দুর্গন্ধ হলে করণীয়
অনেক সময় ফ্রিজে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এর একটি কারণ হতে পারে ফ্রিজের
খাবারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়া। এর করণীয় হিসেবে আমরা খাবারের পাত্র
গুলো এয়ার টাইট কন্টেনিয়ার দিয়ে ঢেকে রাখতে পারি।এবং ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর
করতে আমরা ফ্রিজে লেবু এবং বেকিং সোডা অথবা কফি পাউডার রেখে দিতে পারি।
অনেক সময় ফ্রিজ তার কার্যকারিতা হারালেও দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে। তাই
আমাদের উচিত হবে একটি ভালো মানের ফ্রিজ ব্যবহার করা। যেসব ফ্রিজ এর ভেতরের সঠিক
ও প্রয়োজনে তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে এবং খাবার সংরক্ষণের পরেও খাবার সতেজ
রাখতে পারে,
এই ধরনের ফ্রিজ আমাদের ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ফ্রিজের পরিষ্কার
পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ফ্রিজে যাতে জীবাণুন সংক্রমণ না হয়
সেদিকে খেয়াল রাখলেও ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করা সম্ভব। আপনি চাইলে এই উপায় গুলো
অনুসরনের মাদ্ধ্যমে আপনার ফ্রিজের যত্ন নিতে পারেন।
মন্তব্যঃ ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম ও ফ্রিজের যত্ন
অতীতে অধিক দাম এবং বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল
এর কারণে ফ্রিজের ব্যবহার এর খুব একটা প্রচলন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে দেশীয়
কোম্পানির ফ্রিজ পাওয়ার জন্য এর ব্যবহার খুব ভালোভাবেই চলছে।প্লিজ উৎপাদনের কারণে আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হয়েছে।
এবং দীর্ঘমেয়াদি খাবার সংরক্ষণ করতে পারছে। খাবার সংরক্ষণ করার জন্য ফ্রিজের
গুরুত্ব এখন অপরিসীম। কিন্তু খাবার সংরক্ষণের নিয়ম জানলেই সেটি ফ্রিজের
সংরক্ষণ করা যাবে। এবং ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করতে হলে ফ্রিজের যত্ন নিতে হবে।
তাই ফ্রিজের যত্ন সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url