জান্নাতের বর্ণনা ও প্রকারভেদ
প্রতিটি মুমিন মানুষের সর্বশেষ ঠিকানা হবে জান্নাত। জান্নাত এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ কষ্ট বলতে কোনো শব্দের সম্মুখীন হবে না। থাকবে নানা নাজ নেয়ামত। মন যা কামনা করে সবই পাওয়া যাবে সেখানে। জান্নাতে থাকবে না কোনো হিংসা হানা হানি।
মানুষ দুনিয়াতে যা না পাবার বেদনার স্বাদ পেত জান্নাতে গিয়ে সেই সব জিনিস এর পূর্ণতা পাবে। শান্তির অপর নাম হলো জান্নাত। আসুন জান্নাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।এবং জান্নাত কত প্রকার ও কি কি এবং কোন জান্নাত কেমন হবে সে সম্পর্কেও জেনে নেই।
পেজ সূচিপত্রঃ জান্নাতের বর্ণনা ও প্রকারভেদ
- জান্নাতের বর্ণনা ও প্রকারভেদ
- জান্নাত এর ভাগ সমূহ
- জান্নাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ
- জান্নাতে অমরত্ব,চিরযৌবন ও চিরস্থায়ীত্ব লাভ
- জান্নাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ঘোষনা
- জান্নাতে যারা প্রবেশ করবেন
- মানুষ পূর্ব থেকেই জান্নাতের অধিকারী
- আল্লাহর কুদরতী মুষ্ঠিতে জান্নাত লাভ
- জান্নাতীদের ইয়াকূত নির্মিত ঘোড়া
- জান্নাতে সোনা ও রূপার তৈরী ইমারত
- জান্নাত পাওয়ার জন্য আমাদের করণীয়
- মন্তব্যঃ জান্নাতের বর্ণনা ও প্রকারভেদ
জান্নাতের বর্ণনা ও প্রকারভেদ
জান্নাতের বর্ণনা পবিত্র কুরআন এ বিভিন্ন সূরা তে অনেক বার এসেছে। আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন এর সূরা আল-বাকারার ২৫ নাম্বার আয়াত এ বলেন,যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত,
যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তাদেরকে যখনই ফলমূল খেতে দেয়া হবে, তখনই তারা
বলবে, আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা হিসেবে যা দেয়া হতো,
এতো তারই মতো। একই রকম ফল তাদেরকে দেয়া হবে এবং সেখানে রয়েছে তাদের জন্য পবিত্র
সঙ্গিণী, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে।এখানে জান্নাতের বর্ণনায় আল্লাহ বলছেন
জান্নাতে নদী প্রবাহিত হবে এবং সেখানে পৃথিবীর ফলের মত দেখতেই ফল ও থাকবে।
জান্নাতীগণ অবাক হয়ে বলবেন যে এই ফল গুলো তো আমরা আগেও খেয়েছি।
কিন্তু যখন তারা সেই ফল গুলো খাবেন তখন বুঝবেন তাদের পৃথিবীতে খাওয়া ফল আর এই
জান্নাতী ফল দেখতে এক হলেও এদের স্বাদে রয়েছে অনেক পার্থক্য।জান্নাতীদের জন্যে
জান্নাতে রয়েছে পবিত্র রমনী বা হুর। এই হূর দের বৈশিষ্ট্য হলো এদের কখনো হায়েজ হয়
না। এরা স্বামীভক্তা,অনুরক্তা,সুহাসিনী,সুকেশিনী। তারা সম্পূর্ণ পরকিয়া মুক্ত
পবিত্র সৃষ্টি।
আবার সূরা আল-ইমরান এর ১৩৩ নাম্বার আয়াত এ আল্লাহ বলেন,তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও
তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে
আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। জান্নাত কত বড় হবে
তা সম্পর্কে আল্লাহ প্রাথমিক ধারনা দিয়ে বলেন যে আসমান ও জমীন এর দূরত্ব যত বড়
জান্নাত তত জায়গা জুড়ে বিস্তার করছে।
একটি হাদিস থেকে জানা যায় সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার জান্নাত
হবে এই পৃথিবীর দশ গুন এর সমান। সূরা আল-হিজির এর ৪৫ নাম্বার আয়াত এ আল্লাহ
বলেন,মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে আর নির্ঝরিণীগুলোর মধ্যে। জান্নাতে দুধের
নদী,মধুর নদী,পানির নদী,ফলের রসের নদী থাকবে। পাশা পাশি সেখানে থাকবে ঝর্ণা।
জান্নাতে সব জায়গা জুড়ে সুঘ্রাণ বিরাজ করবে।
সেখানে থাকবে না কোন অসাড় কথা বার্তা। জান্নাতীদের কাজে নিয়োজিত থাকবে চিরকিশোর
গণ।জান্নাত মুলত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়। অনেকে যেই ভুল ধারনা করে বসেন জান্নাত শুধু
মাত্র ৮ টি বোধয়।প্রকৃতভাবে জান্নাত একটি কিন্তু এর দরজা ৮ টি। আসুন আরো ভালভেব
বিষয়টি ব্যাখা করা যাক।
জান্নাত এর ভাগ সমূহ
বেহেস্ত ৮ প্রকার। জান্নাতুল ফিরদাউস,জান্নাতুন্না ঈম,জান্নাতুল মাওয়া,জান্নতুল
খুলদ,দারুসসালাম, দারুল কারার,জান্নাতুল আদন,ইল্লিয়্যিন। এই আট প্রকার জান্নাত
বুঝতে হলে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। সৌর জগত সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। সৌর জগতের ৮
টি গ্রহ রয়েছে।
এমন অনেক গুলো সৌর জগত মিলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। প্রতিটি সৌর জগত কে তুলনা করা
যাক এক একটি জান্নাতের সাথে। ধরে নেই আমাদের সৌর জগত ইল্লিয়্যীন জান্নাত।
সৌরজগতের মত এমন আরো একটি নক্ষত্র যার গ্রহ রয়েছে সেটি হলো দারুল কারার জান্নাত।
তাহলে এখানে প্রতিটি গ্রহ হবে একট একটি জান্নাতীর ঘর,এবং প্রতিটি গ্রহ বিশিষ্ট
নক্ষত্র সমূহ একেকটি জান্নাতের স্তর। অর্থাৎ প্রতিটি জান্নাতের স্তর এখানে
মর্যাদা বুঝানো হয় কোনটি থেকে কোনটি মর্যাদায় উচু। ৮ প্রকার জান্নাত শুনে ৮ টি
জান্নাত ভেবে কেও মনে করার কোন প্রয়োজন নেই যে,সেখানে থাকার জায়গা সংকীর্ণ হবে।
বরং জান্নাতে কোনো কিছুর অভাব হবে না। আল্লাহ তায়ালা জান্নাত তৈরি করে তার ১০০
ভাগের ৩ ভাগ সৌন্দর্য সৃষ্টির সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করেছেন। আর বাকি ৯৭ ভাগ
সৌন্দর্য লুকিয়ে রেখেছেন। অর্থাৎ পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য সহ যত সৌন্দর্য আমাদের
চোখে পড়ে তার চেয়ে ৯৭ ভাগ বেশি সুন্দর জান্নাত।
জান্নাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেন, যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে
সাক্ষাৎ করার কামনা করে সে যেন সৎ কার্য করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য
কাউকে শরীক না করে। এই আয়াত থেকে প্রমাণ হয় যে জান্নাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ
হবে।
কোন মানুষ কে যদি প্রশ্ন করা হয় জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত কি হতে পারে, তাহলে
প্রতিটি ব্যক্তি যে যেই সমস্যা তে আছে সে সেই সমস্যার সমাধান কে জান্ননাতের
সবচেয়ে বড় নিয়ামত মনে করবে। প্রকৃত পক্ষে একজন মানুষের দেহের খাদ্য আসে মাটি থেকে
আর আত্মার খাদ্য আসে আল্লহর সান্নিধ্য পেলে।
তাই বস্তুগত যত নিয়ামত ই কেও পেয়ে যাক না কেন যদি আল্লাহর সান্নিধ্য না পায় তাহলে
কোন কিছুই তাকে পূর্ণতা দিতে পারে না। তাই জান্নাতের সকল প্রকার নাজ
নেয়ামত,সুন্দরী স্ত্রী পাবার পরেও জান্নাতী দের যেই অভাব অনুভব করবে সে হলো
আল্লাহর সান্নিধ্যের অভাব।
আর আল্লাহর দীদার হবে জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত।আল্লাহ তায়ালা জান্নাতুল
ইল্লিয়্যীন এ সকল জান্নাতী বান্দা দের সাথে দেখা দিবেন। আল্লাহ তায়ালা কে দেখার
পর সক্লের চেহারার সৌন্দর্য অত্যাধিক বেড়ে যাবে। সবাই আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য
হবেন এবং তারা পূর্ণতা লাভ করবেন।
জান্নাতে অমরত্ব,চিরযৌবন ও চিরস্থায়ীত্ব লাভ
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতবাসীদের সম্মোধন করে
একজন ঘোষণাকারী মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ হতে ঘোষণা করবেন তোমাদের জন্য নিম্নোক্ত নিয়ামত সমূহ স্থায়ীভাবে বিধিবদ্ধ করা হলো-
- তোমাদের স্থায়ী সুস্বাস্থ্য প্রদান করা হলো এবং এর পর তোমরা কখনই অসুস্থ হবে না।
- তোমাদের মৃত্যুঞ্জয়ী জীবন দান করা হলো এবং এর পর আর কখনো মৃত্যু তোমাদের স্পর্শ করবে না।
- তোমাদের চির যৌবন দান করা হলো এবং এর পর আর কখনো তোমাদের বয়স বাড়বে না।
- এই সমস্ত নানা রকম অসমাপ্ত নেয়ামত এর ভেতর তোমরা সময় কাটাবে যার পর কখনো বিষন্ন ও দুঃখিত হবে না।
অসুস্থতা ও বার্ধক্য মানুষের জীবনে সুন্দর মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করতে বাধা দান
করে। এবং মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের জীবনের নাশ ঘটে। জান্নাতে যাতে এই ধরনের কোন
ঘটনা না ঘটে সেইজন্য আল্লাহ তাআলা অসুস্থতা, মৃত্যু এবং বার্ধক্যকে চিরজীবনের
জন্য দূরীভূত করে দিয়েছেন। এবং নিশ্চয়তা দান করেছেন যে এই সমস্ত নাজনিয়া মোজে
যেগুলো জান্নাতীরা উপভোগ করছে সেগুলো অনন্তকাল দ্বারা উপভোগ করতে পারবে এবং
কোনদিনও তাদেরকে জান্নাত থেকে বের করা হবে না।
জান্নাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ঘোষনা
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,আল্লাহ তায়ালা জান্নাতবাসিকে
সম্বোধন করে বলবেন, হে জান্নাত বাসিগণ। তখন জান্নাতবাসীরা বলবে উপস্থিত আছি হে
পরওয়ার দিগার।আপনার দরবারে অনুগত দাস রূপে উপস্থিত সমূহ কল্যাণ ও মঙ্গল আপনার
করতল গত।
আল্লাহ তাআলা বলবেন তোমরা কি খুশি হয়েছো।প্রত্যুত্তরে জান্নাতিরা বলবেন আমরা
আপনার প্রতি খুশি। মহান আল্লাহ তখন বলবেন আমি কি তোমাদের এর চেয়েও বেশি
উৎকৃষ্ট ও মূল্যবান নেয়ামত প্রদান করব না।জান্নাত বাসীরা তখন বলবে এর চাইতে
উৎকৃষ্ট মূল্যবান কোন নিয়ামত আছে কি।
আল্লাহ বলবেন অবশ্যই আছে আর তা হলো তোমাদের উপর আমার চিরন্তন সন্তুষ্টি যার পর
কখনো আমি তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট বা রাগান্বিত হবো না। সকল সৃষ্টির মালিক হলেন
মহান রাব্বুল আলামিন। তিনি যদি বান্দাদের উপর সন্তুষ্টি থাকেন তাহলে সেই বান্দা
দের আর কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না।
বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা মানে যাবতীয় সকল কিছু তার হয়ে যাওয়া। আর
জান্নাতীদের উপর সরাসরি আল্লাহ যখন নিজের সন্তুষ্টি ঘোষণা করে দিবেন তখন তাদের
নিয়ামতের কোন কিছুই আর অপূর্ণতা থাকবে না। তারা পূর্ণ নিয়ামত সহকারে
অনন্তকালীন শান্তির জীবন ভোগ করবে।
জান্নাতে যারা প্রবেশ করবেন
মহান রব্বুল আলামিন সূরা আল বাকারার ৮২ নাম্বার আয়াতে বলেন, আর যারা
ঈমান আনে ও নেক আমাল করে তারাই জান্নাতবাসী, তারা সেখানে চিরস্থায়ী
হবে। আবার অন্য একটি আয়াত এ বলেন, দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের
ক্ষমার দিকে
ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা
মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। আয়াত সমূহ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে সমস্ত
মানুষ ঈমান এনেছে অনেক আমল করেছে অর্থাৎ মুত্তাকী হয়েছে তারাই জান্নাতে
প্রবেশ করবে।
জন্নাতে প্রবেশ করার শর্ত হলো আল্লাহ তায়ালার ওপর ইমান আনা,ফেরেশতা গনের উপর
ইমান আনা,আসমানী কিতাব সমূহের উপর ঈমান আনা, নবী ও রাসুল গনের উপর ইমান
আনা,মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর ইমান আনা,তাকদির এর ওপর ইমান আনা।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি ইমান এনেছে সে ই কেবল জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর পর যদি
কোন মুমিন ব্যক্তি ইমান আনার পর ও অনেক পাপ কাজ করে থাকে আল্লাহ তাকে
জাহান্নামে দিবেন অথবা মাফ করে দিবে। যদি জাহান্নামে দেয় তাহলে জাহান্নামে
শাস্তি ভোগ করার পর হলেও সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
মানুষ পূর্ব থেকেই জান্নাতের অধিকারী
রব্বুল আলামীন মানব সৃষ্টির ইতিহাসে সর্বপ্রথম যে মানুষকে সৃষ্টি করেন তিনি
হলেন আদম (আঃ)। আদম আলাই সাল্লাম কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তাআলা তাকে
জান্নাতে রাখেন। আদম (আঃ) কে সিজদা না করার অপরাধে ইবলিশকে জান্নাত থেকে
বহিষ্কার করা হয়। সেই ক্ষোভ থেকে আদম (আঃ) এর ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। মূলত
আদম (আঃ) ছিলেন জান্নাতের অধিবাসী।
যখন আদম (আঃ) একাকীত্ব অনুভব করে তখন হাওয়া কে তার সঙ্গিনী হিসেবে সৃষ্টি
করেন এবং তাদের বিবাহ দেয়। ইবলিশ শয়তান তাদেরকে ধোকা দেয় এবং নিষিদ্ধ
গাছের ফল খেতে বাধ্য করে। যার শাস্তির শুরু মানব ইতিহাসের প্রথম দুই মানুষকে
আল্লাহ জান্নাত থেকে বহিষ্কার করেন এবং পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। কিন্তু আল্লাহ
তাদের সাথে এই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন যে নেক আমল করার পর নির্দিষ্ট সময়
অতিবাহিত হলে তাদেরকে পুনরায় জান্নাতে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের জন্য আল্লাহ জান্নাতে ঘর নির্ধারিত করে রেখেছেন। সেই
ঘর এখন প্রতিটি মানুষকে অর্জন করে নিতে হবে। মানুষ পূর্ব থেকেই জান্নাতের
অধিকারী। যদি সে আল্লাহর হুকুম আহকাম অমান্য না করে তাহলে তার থেকে সেটা
ছিনিয়ে নেয়া হবে না। এর বিপরীতে জান্নাত ছিনিয়ে জাহান্নাম দেওয়া হবে।
আল্লাহর উপর ঈমান রাখলে জান্নাতের অধিকারী কে তার জান্নাত দেওয়া হবে।
আল্লাহর কুদরতী মুষ্ঠিতে জান্নাত লাভ
মুসলমানগন যখন জাহান্নাম হতে মুক্তি প্রাপ্ত হবেন তখন তারা দোযখী মুসলিম
ভাইদের জন্য আল্লাহর নিকট আবেদন করবেন। তারা আল্লাহকে বলবেন তারা তো আমাদের
সাথে রোজা, নামাজ, হজ্জ পালন করতো। তাদের মুক্তির জন্য ফরিয়াদ করবেন। মহান
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি
দিবেন।
অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দেওয়ার পর বলবেন হে আল্লাহ
আপনি যাদের মুক্তির ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের কেউ জাহান্নামে নেই।
কিন্তু আরো অন্য অনেক মুসলমান জাহান্নামে আছে। আল্লাহ তখন আদেশ দিবেন যাদের
মনে এক দিনার পরিমাণ ঈমান থাকবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসার। তখন অনেক
জাহান্নামীকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে।
আরো পড়ুনঃ তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
এরপর আল্লাহ আবারও নির্দেশ দিবেন যাদের অন্তরে অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান
আছে তাদেরকে বের করে আনার জন্য। এরপর আবারো আর নির্দেশ দিবেন যাদের মনে এক
বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসার জন্য।এভাবে
পর্যায়ক্রমে নবী রাসুল, ফেরেশতা ও মুমিনদের সুপারিশক্রমে অনেক লোককে
জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে।
আল্লাহর দয়া ছাড়া কোন মানুষকে আর বের করা সম্ভব হবে না। তখন আল্লাহ নিজ
কুদরতি হাতে মুষ্টি ভরে জাহান্নাম থেকে মানুষ বের করে আনবেন। আল্লাহ তার
দয়া দ্বারা বান্দাদের জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এবং এই দল
টিই আল্লাহর নিজের কুদরতী হাতের রহমত লাভ করবেন।
জান্নাতীদের ইয়াকূত নির্মিত ঘোড়া
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে এসে জিজ্ঞেস করল জান্নাতে ঘোড়া
পাওয়া যাবে কিনা। মহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন মহান আল্লাহ
যদি সেই ব্যক্তিকে জান্নাতবাসী করেন তাহলে সে ব্যক্তিকে লাল বর্ণের ইয়াকুত
পাথর নির্মিত ঘোড়া তাকে দান করা হবে।
এবং সেই ঘোড়ায় আরোহন করে সমগ্র জান্নাত এর যেখানে সেখানে মনে স্বাদ মিটে
ঘুরতে পারবে। অর্থাৎ জান্নাত এমন একটা জায়গা যেখানে কারো কোন মনের
ইচ্ছা অপূর্ণ রাখা হবে না। যেটা ইচ্ছা পোষণ করে জান্নাতে সেটি মিলবে।
ইয়াকূত নির্মিত ঘোড়া তার একটি উদাহরণ।
জান্নাতে সোনা ও রূপার তৈরী ইমারত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে হযরত আবু হোরায়রা জিজ্ঞাসা
করেছিলেন বেহেস্তের ইমারত সম্পর্কে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন বেহেস্তের ইমারত হবে প্রতি দুই ইটের একটি স্বর্ণের ও একটি
রুপার গাঁথুনি।
মেসক হবে তার সিমেন্ট, মনিমুক্তা ও ইয়াকূত পাথর সুরকি আর মাটি হবে
জাফরান। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় জান্নাতের ঘরগুলো হবে সোনা ও রুপার।
অর্থাৎ তার ঈদ গুলো তৈরি হবে সোনার ও রুপার দিয়ে। এমনকি সেখানে একটা গাছ
থাকবে সেই গাছের কান্ড ও হবে সোনার।
জান্নাত পাওয়ার জন্য আমাদের করণীয়
জান্নাত পাওয়ার আমাদের প্রথমত আল্লাহর উপর ঈমান আনতে হবে। অধিক সংখ্যক
আমল করার চেয়ে অল্প আমল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করাই শ্রেয়। অধিক আমল
করে সেটার মধ্যে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি না থাকে তাহলে সেই আমল কোন কাজে
দেবে না।
আর অপরদিকে অল্প আমল যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা হয় এবং সেটাতে
যদি আল্লাহ সন্তুষ্টি থাকে তাহলে সেটি নাজাতের উসিলা হিসেবে কাজ করবে।
জান্নাত পাওয়ার জন্য আমাদের নেক আমল করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হলো অন্যের অধিকার নষ্ট করা যাবে না।
যদি কেউ কোন আমল করতে ব্যর্থ হয় যেটা আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত তাহলে হয়তো
সে মাফ পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু কারো অধিকার নষ্ট করলে,যার অধিকার নষ্ট করা
হয়েছে সে যদি মাফ না করে তাহলে সাধারণত মাফ পাওয়া যাবে না এবং জান্নাত
লাভ করা অসম্ভব হবে।কাজেই,অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যতটুকু
সম্ভব নেক আমল করতে হবে।
মন্তব্যঃ জান্নাতের বর্ণনা ও প্রকারভেদ
আল্লাহ তাআলা তার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব নেয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছেন
যা কখনো চর্ম চক্ষু দেখেনি।কোন কান তা শুনেনি। এবং কোন হৃদয় উপলব্ধি করতে
পারেনি। অর্থাৎ জান্নাতে এমন সব নেয়ামত রাজি আছে যা আমরা প্রথমবার দেখার
পর অবাক হয়ে যাব।
জান্নাতের মহিলা যদি পৃথিবীর দিকে একবার উঁকি মেরে দেখে তাহলে সমগ্র
পৃথিবী আলোকিত ও সুরভিত হয়ে যাবে।এবং তার মাথার ওপর ওড়না সমগ্র পৃথিবী ও
পৃথিবীর মাঝে যা আছে তার চেয়েও অধিক মূল্যবান।
এমন অসংখ্য নাচ নেয়ামত জান্নাতে পাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় নেয়ামত হিসেবে
যা পাওয়া যাবে সেটা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ। এই নিয়ামত সমূহ পেতে
হলে আমাদেরকে অবশ্যই ভালো মানুষ হিসেবে বাঁচতে হবে।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url