মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কেমন

মানুষ মরণশীল। ইসলাম অনুসারে প্রতিটি মানুষকে দুইবার মৃত্যু এবং দুইবার জীবিত হতে হয়।দুইবার মৃত্যু বলতে বোঝানো হচ্ছে জন্মের আগে মৃত অবস্থা এবং জন্মের পর মৃত অবস্থা। এবং দুইবার জন্ম বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রথমবার জন্মগ্রহণ করা এবং পরকালের জন্য জন্মগ্রহণ করা।

মৃত্যুর-পরবর্তী-জীবন-কেমন

মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কেমন হবে তা আমরা কেউ জানিনা। তবে কুরআন থেকে এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বাণী থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে। মৃত্যুর পর প্রতিটি ব্যক্তির সাথে তার আমল দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন  আচরণ করা হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কেমন 

মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কেমন

মূলত একজন মানুষের পরকালীন জীবন শুরু হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। ইহকালীন জীবন থেকে পরকালীন জীবনে পার হওয়ার একটি সেতু হলো মৃত্যু। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যু থেকে তার পরবর্তীকালীন জীবন একটা বিস্ময়কর বিষয়। একজন মানুষের মৃত্যুর পর প্রথমে কবরের মাধ্যমে তার বারযাখ জীবনে শুরু হয়।

একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর অবস্থা একরকম আর কাফের ব্যক্তির মৃত্যুর অবস্থা আরেকরকম। দুই রকম ব্যক্তির সাথে আচরণও করা হয় দুই রকম। বারযাখ জীবন থেকে শুরু করে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছাতে একজন মুমিনকে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। বারযাখ জীবনের পর কেয়ামত। কেয়ামতের পর হাশরের মাঠে সবাইকে দাড় করানো হবে। হাশরে বিচার হবে।

মিজানে পাপ পূন্যের হিসাব নিকাশ করা হবে। পুলসিরাত পার করতে হবে। অবশেষে জান্নাত অথবা জাহান্নাম। তবে এমন অনেক মুমিন ব্যক্তি থাকবে যাদের কে আল্লাহ এই ধাপগুলো পার করার আগেই সরাসরি জান্নাত ঘোষণা করে দিবেন। ইহ কালীন জীবনে একজন মানুষ বর্তমানে গড় আয়ু পায় ৬০ বছর থেকে ৬৫ বছর।এই ৬০ থেকে ৬৫ বছর একজন মানুষের কাছে মনে হয় অনেক দীর্ঘ।

কিন্তু ইহকালীন জীবনের চেয়ে বারযাখ জীবন আরো দীর্ঘ। বারযাখ জীবনে তুলনায় হাশরের মাঠ আরো দীর্ঘ।অবশেষে জান্নাত ও জাহান্নাম অনন্তকালের। এই জান্নাত আর জাহান্নাম ই প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা শেষ ঠিকানা। মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এর সংক্ষিপ্ত দৃশ্য এটিই। 

মুমিন ব্যক্তির মৃত্যু যেমন হবে

মুমিন ব্যক্তির মৃত্যু  আনন্দদায়ক হবে। মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় অনেক ফেরেশতা আকাশ থেকে নামবে। ফেরেশতা গণের চেহারা সূর্যের মতো উজ্জ্বল হবে। তারা সাথে করে বেহেশতি কাপড় ও বেহেশতি আতর আনবে। মুমিন ব্যক্তিটি তাদের কে স্পষ্ট করে দেখতে পায় এমন জায়গায় এসে ফেরেশতাগণ বসবেন।

তারপর পরই মালাকুল মাউত বা মৃত্যুর ফেরেশতা এসে কুরআন মাজিদ এর সূরা আল-ফজর এর শেষ আজ সমূহ থেকে কথা বলবেন।  তিনি বলবেন, হে পবিত্র আত্মা, তুমি বের হয়ে আসো তোমার রবের দিকে সন্তুষ্টিভাজন হয়ে।অতঃপর নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো।এই কথাগুলো শুনে সেই আত্মা এমন ভাবে বের হয়ে আসবে যেমনভাবে বের হয়ে আসে একটি ভরা কলসি থেকে পানির স্রোত।

অথবা একটি বাচ্চা তার মায়ের বুকের দুধ খেতে খেতে যখন  ঘুমিয়ে যায়,তার ঠোঁট থেকে মায়ের স্তন যেভাবে বিচ্ছিন্ন হয় সেভাবে। অর্থাৎ কোন ভরা কলস থেকে পানি বের হতে যেমন কোন কষ্ট হয় না অথবা কোন মায়ের বুকের স্তন থেকে বাচ্চার মুখ বিচ্ছিন্ন হতে যেমন কোন কষ্ট হয় না,ঠিক তেমনি ভাবে মুমিন ব্যক্তির দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে আসতে কোনই কষ্ট হবে না।

এভাবে যখন আত্মাটি বের হয়ে আসবে মালাকুল মাউত উক্ত আত্মা  নিজ হাত থেকে খুব দ্রুতই ওই জান্নাতি ফেরেশতাদের হাতে দিয়ে দিবেন। এবং রহমতের ফেরেশতাগণ সেই আত্মাটিকে তাদের সাথে নিয়ে আসা সুঘ্রাণ যুক্ত জান্নাতি কাপড়ে মুড়িয়ে নিবে। অনেকটা একটি নতুন শিশুর জন্ম গ্রহণ করার মত।
যখন কোন পরিবারের নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন সেই শিশুটিকে কোলে নেওয়ার জন্য পরিবারের লোকজন আত্মহারা হয়ে ওঠে। ওই মুমিন ব্যক্তির আত্মাটি নেওয়ার জন্য ফেরেশতাগণ ঠিক তেমনি আত্মহারা হয়ে উঠবে।মুমিন ব্যক্তিটিকে যেই কাপড় দিয়ে মোড়ানো হবে সে কাপড় থেকে যে সুঘ্রানটি বের হবে পৃথিবীর কোন সুঘ্রাণ এর সাথে তার তুলনা করা যায় না।

ফেরেশতাগণ সেই আত্মাটিকে নিয়ে তারপর আকাশে যেতে থাকবে। আকাশে থাকা ফেরেশতা গণ বহনকারী ফেরেস্তা কে জিজ্ঞেস করবেন উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে অর্থাৎ তার পরিচয় জানতে চাইবেন।জানতে চাইবেন ওই পবিত্র আত্মাটি কার। ফেরেশতাগণ উক্ত আত্মার পরিচয় তার পিতার পরিচয়  সহ দিবেন। অর্থাৎ বলবেন ইনি অমুকের পুত্র অমুক।

ঈমানদার ব্যক্তি দুনিয়াতে যত সম্মান সুখাতীর অধিকারী ছিল এবং মানুষ যেভাবে তার প্রশংসা করত ফেরেশতাগণ তার চেয়ে অধিক প্রশংসা করতে থাকবে। এভাবে প্রথম আসমান থেকে শুরু করে দ্বিতীয় আসমান,তৃতীয় আসমান সর্বশেষ সপ্তম আসমান পর্যন্ত রূহকে নিয়ে যাওয়া হবে। মহান আল্লাহ তা'আলা তখন ঘোষণা করবেন উক্ত রুহের নাম ইল্লিয়্যিন এ লিপিবদ্ধ করতে। তারপর সেই বান্দার রূহ আবারো দুনিয়াতে ফেরত পাঠানো হবে।

কাফির ব্যক্তির মৃত্যু যেমন হবে 

কাফির ব্যক্তির মৃত্যুর অবস্থা হবে মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর উল্টো। কাফির ব্যক্তির জন্য আকাশ থেকে ফেরেশতারা আসবেন ভয়ংকর আকৃতি নিয়ে। মুমিন ব্যক্তি যেমন রহমতের ফেরেশতাদের স্পষ্টভাবে দেখতে পারছিলেন কাফির ব্যক্তিও তেমনি ভয়ংকর আকৃতির সেই  ফেরেশতাদের দেখতে পাবেন।

মালাকুল মাউত অর্থাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা সেই কাফির ব্যক্তিকে বলবেন,হে অপবিত্র আত্মা,তুমি আল্লাহর গজবের দিকে বেরিয়ে আসো। এই কথাগুলো শোনার পর সেই অপবিত্র আত্মাটি শরীরের ভেতরে লুকানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু মালাকুল মাউত এই অপবিত্র আত্মা কে এমন ভাবে টেনে বের করবেন,
মৃত্যুর-পরবর্তী-জীবন-কেমন
যেমন ভেজা পশমের ভেতর জ্বলন্ত আগুনের কয়লা ঢুকিয়ে দিয়ে জোর করে টেনে বের করে তেমন। অপবিত্র আত্মাটি বের হতে চাইবেন না এবং শরীরের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু মালাকুল মাউত সেটি জোরে টেনে বের করবেন।

আতাটি বের করে করার সাথে সাথেই জাহান্নামের ছালায় সেই আত্মাটি রাখবেন। এবং সে আত্মা থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকবে। এবং সে আত্মাটিকে নিয়ে আকাশের দিকে উক্ত ফেরেশতাগণ রওনা দিবেন। মুমিন ব্যক্তির আত্মা যেভাবে পরিচয় করে দেয়া হচ্ছিল,

একইভাবে এই কাফির ব্যক্তির আত্মাকেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে।কিন্তু মুমিন ব্যক্তির আত্মাকে সাধুবাদ জানার জন্য হচ্ছিল কিন্তু কাফির ব্যক্তির আত্মাকে তিরস্কৃত করা হবে। মুমিন ব্যক্তির জন্য সাত আসমানের সাতটি দরজা খুললেও কাফির ব্যক্তির জন্য দরজা খুলবে না।

আল্লাহ তাআলা তখন ঘোষণা করবেন কাফির ব্যক্তির নামটি সিজ্জিয়্যিন এ লিখে দিতে। এরপর সেই আত্মাটিকে আকাশ থেকে নিচের দিকে নিক্ষেপ করা হবে। কাফির ব্যক্তির মৃত্যু খুবই কঠিন হবে। মৃত্যুর সময় কাফির ব্যক্তিকে মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়া হবে। এবং তার আত্মা দুঃখ কষ্ট অনুভব করবে। 

মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য জীবিতদের করণীয়

হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুর সময় কালিমা পড়ে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তিনি জান্নাতী হবেন। মুমূর্ষু ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের তার পাশে বসে উচ্চস্বরে  কালীমা পাঠ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই যেই ভুলটা করেন মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালিমা পাঠ করতে বলেন।

শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি কালিমা করতে অস্বীকার করে তাহলে হিতে বিপরীত হবে অর্থাৎ জান্নাতের বদলে জাহান্নাম নির্দিষ্ট হতে পারে। কাজেই মুমূর্ষ ব্যক্তিকে কালিমা পড়ার জন্য বলা যাবেনা বা জোর করাও যাবে না। তার পাশে শুধু উচ্চস্বরে কালিমা পাঠ করতে হবে।

এটা শুনে শুনে হয়তো সে কালেমা পাঠ করবে। মুমূর্ষু ব্যক্তির রূহ বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এই দোয়া পড়তে হবে, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।এরপর দ্রুত চারিদিকে খবর পৌঁছে দিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব জানাযা ব্যবস্থা করতে হবে।

মৃত্যুর পর মানুষের জানাজা সম্পন্নতে দেরি করা উচিত নয়। হাদিস শরীফ থেকে জানা যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুত জানাযা করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন।তাই আমাদেরও উচিত নবী করীম সাঃ এর কথা মেনে চলা এবং দ্রুত জানাজা করে ফেলা।

মৃত্যু যন্ত্রণা যেমন হবে

মৃত্যু যন্ত্রণা সাধারণত কাফির ব্যক্তির হয়ে থাকে। এবং মুমিন ব্যক্তিদের মধ্যেও যারা দুনিয়াতে পাপ কাজ করেছে কিন্তু সেই পাপ  এখনো মোচন হয়নি তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যু যন্ত্রণা দিয়ে কিছুটা পাপ মোচন করা হবে। মৃত্যুর যন্ত্রণা খুবই ভয়াবহ জিনিস।

কাফির এবং পাপী ব্যক্তির আত্মা বের হওয়ার সময় যে কষ্ট হবে সে কষ্ট তলোয়ারের আঘাতে টুকরো টুকরো হওয়ার কষ্ট হতেও অনেক কঠিন। অনেকের মতে যদি শরীরের কোন অংশে আগুন লাগে তখন যেমন কষ্ট হয় মৃত্যু যন্ত্রণা সেরকম কষ্ট কঠিন।

মৃত্যুর সময় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছিলেন যে,হে আল্লাহ, অস্থি ও শিরা সমূহ হতে তুমি রূহ টেনে বের করছ এ যন্ত্রণা আমার উপর সহজ করো।নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন,তলোয়ারের দ্বারা ৩০০ আঘাত করলে যে রূপ যন্ত্রণা হয় মৃত্যু যন্ত্রণা সেরকম।
কাজেই মৃত্যু যন্ত্রণা কাফেরদের জন্য এবং পাপী মুমিন  ব্যক্তির জন্য ভয়ংকর বিষয়। হাদিস থেকে জানা যায় হঠাৎ মৃত্যু মুসলমানদের পক্ষে আরাম এবং কাফিরের পক্ষে ক্ষোভ। মুসা (আঃ) এর মৃত্যুর সময় আল্লাহ মূসা (আঃ) কে জিজ্ঞেস করেন মৃত্যু যন্তনা সম্পর্কে।মুসা (আঃ) এর উত্তরে বলেন,

জীবন তো একটি পাখিকে ভাজা করার মত। যেমন সে উড়ে যেতে পারে না বা মরেও যন্ত্রণা হতে মুক্তি লাভ করতে পারে না। উপরের এই বিষয়গুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে মৃত্যু যন্ত্রণা কত কঠিন বিষয়। মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।সুরা ইয়াসিন নিয়মিত পাঠ করলে মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে আল্লাহ হেফাজত করবেন। 

মৃত্যুর পর পূর্বে মৃতদের সাথে কথোপকথন 

দাফন শেষ হওয়ার পর একজন মৃত ব্যক্তি একদম একা হয়ে যায়। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পরিবার পরিজন, ভাই, বোন, বন্ধুবান্ধব সকলের থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি মুমিন হয় অর্থাৎ তার যদি কবরের শাস্তি না হয়ে থাকে এবং তার নাম যদি ইল্লিয়্যিন এ লেখা হয়,
মৃত্যুর-পরবর্তী-জীবন-কেমন
তাহলে তার পূর্ববর্তী যেসব আত্মীয়-স্বজন মারা গিয়েছেন  তাদের মধ্যে যারা ইল্লিয়্যিন এর সদস্য হয়েছেন  তাদের সাথে ওই মৃত ব্যক্তির দেখা হবে। এবং তারা নানা বিষয়ে কথোপকথন করবে । তারা জিজ্ঞেস করবে অমুকের কি খবর। জিজ্ঞেস করবে সে এখন কি করে।

এরকম নানা দুনিয়াবী প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন। তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি সিজ্জিয়্যিন সদস্য হয়ে থাকেন তাহলে তাদের সাথে দেখা হবে না। পূর্বে মৃত ব্যক্তিরা সদ্য মৃত ব্যক্তিকে অন্য কোন ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিতে দিবেন  উনি তো অনেক আগেই মারা গেছেন।

তখন প্রশ্নকারী মৃত ব্যক্তিরা নিশ্চুপ হয়ে যাবেন। তারা বুঝতে পারবেন ওই ব্যক্তি সিজ্জিয়্যিন এর সদস্য হয়েছেন। এমন ভাবেই পূর্ববর্তী কালে যেসব মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন সেসব মানুষের সাথে সদ্য মৃত ব্যক্তির কথা হবে।

হাশরের ময়দান যেমন হবে

হাশরের মাঠে সকল মানুষকে দাঁড় করানো হবে। প্রতিটি মানুষ কবর থেকে বের হয়ে আসবে এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখবে সবকিছুই কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে গেছে। আকাশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে, গ্রহ নক্ষত্র ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

এবং তারা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটি বিশাল এক সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে।এবং তাদের মাথার উপরে সূর্য উপস্থিত হয়ে খুব কড়াভাবে তাপ দিচ্ছে। হাশরের মাঠে ভিন্ন ভিন্ন আমলের মানুষের সাথে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করা হবে।

অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের নিজ আমল অনুসারে তার মর্যাদা উঁচু-নিচু করা হবে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করবেন যার প্রতি দয়া করবেন তার প্রতিও আলাদা আচরণ করবেন। সাধারণভাবে একজন পাপী ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাশরের ময়দান খুবই কঠিন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,হাশরের মাঠে  মাটি এত গরম হবে যে কেউ যদি নিজের সন্তান দেখতে পায় তবে তাকে মাটির উপরে ফেলেই তার উপরে দাঁড়াতে চাইবে। নিজ নিজ আমল অনুসারে সূর্যের তাপে শরীর থেকে ঘাম ঝরবে।

সে ঘামের পানিতে কারো কোমর পর্যন্ত ডুবে যাবে, কারো বুক পর্যন্ত ডুবে যাবে এবং কেউ  হাবুডুবু খাবে। মনে হতে পারে এই কঠিন গরমে অন্তত একটু তো পানি পাওয়া গেলে আরামই হয়। কিন্তু সেই ঘামের পানি  কখনোই আরামদায়ক হবে না।

কিন্তু একজন মুমিন মানুষ তার ক্ষেত্রে এরূপ আচরণ করা হবে না।আল্লাহর আরশে নিচে ছায়া পাবে। এবং সেখানে তার জন্য নানা নাজ নিয়ামত ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এবং তার হিসাবও দ্রুত নেয়া হবে। অথবা হিসাব ছাড়াই জান্নাতে যাবে।

মীযানে বিচার যেমন হবে

মিজান শব্দের অর্থ দাঁড়িপাল্লা।হাশরের ময়দানে আল্লাহ একটি দাঁড়িপাল্লা বা মীযান স্থাপন করবেন। এই মীযানে প্রত্যেকটি বান্দার  পাপ পূণ্য পরিমাপ করা হবে। যদি কোন ব্যক্তির পাপের পাল্লা ভারি হয় তাহলে সে জাহান্নামী হবে আর যদি পুণ্যের পাল্লা ভারী হয় তাহলে সে জান্নাতি হবে।

পাপ পূন্যের হিসাবের পরেও আল্লাহ ইচ্ছা করলে কাউকে জান্নাতে দিতে পারেন। আল্লাহ কারো পাপ পূণ্যের হিসাবের জন্য মীযান এর মুখাপেক্ষী নন।কিন্তু আল্লাহ হলেন ন্যায় বিচারক তাই সকলেই যাতে স্বচক্ষে নিজের বিচার দেখতে পারে সেজন্য এই দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবেন।

মিজানের পাল্লা ভারী করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন সেটি হলো, সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি,সুবাহানাল্লাহিল  আজিম।এটি উচ্চারণে হালকা  এবং মীযানের পাল্লাকে ভারি করে।সকাল ও সন্ধ্যা  এটি আমাদের এটি পড়া উচিত।

পুলসিরাত যেভাবে পার করতে হবে

মিজানের পাল্লায় হিসাবের পর কিছু মানুষ সরাসরি জান্নাতে ও কিছু মানুষ সরাসরি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষকেই পুলসিরাতের ওপর দিয়ে পার হতে হবে। পুলসিরাত হল একটি পুল যার নিচে থাকবে জাহান্নাম এবং যেটি পার করতে পারলেই জান্নাতের দরজা পাওয়া যাবে।

যারা নেককার বান্দা তাদের জন্য এই পুলটি সমতল মসৃণ এবং প্রশস্ত হবে। কিন্তু পাপী বান্দাদের জন্য এই পুল চুলের চেয়েও চিকন এবং তরবারির চেয়েও বেশি ধারালো হবে। মুমিন নেককার বান্দারা নিজ নিজ আমল অনুসারে এই পুলটি পার হবে। কেউ পার হবে চোখের পলকে,

কেউ পার হবে বিদ্যুৎগতিতে আবার কেউ পার হবে বায়ুর গতিতে, কেউবা অতি দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে,কেউ স্বাভাবিক দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে, কেউ দৌড়িয়ে, কেউ হেঁটে আবার কেউ হামাগুড়ি দিয়ে পার হবে। এই পুল পার হতে এক একজনের এক এক রকম সময় লাগবে।

যারা কোরবানিতে যেসব পশু জবেহ করেছিল সেই পশুর পিঠে চড়ে দ্রুত পুলসিরাত পার হবে। অন্যদিকে পাপী বান্দারা পুলসিরাত পার হতে গিয়ে পা কেটে জাহান্নামে পড়ে যেতে লাগলে হাত দিয়ে পুল জড়িয়ে ধরবে। হাতও কেটে যাবে তখন তারা জাহান্নামে পড়ে যাবে।পুলসিরাত পার হতে হবে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে।

প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ আমল অনুসারে আলো পাবে।যারা আমার যত বেশি হবে সে তত বেশি আলোকিত ভাবে পুল পার হবে।সূরা আল কাহাফ তেলাওয়াত করলে পুলসিরাতে এটি আলো হিসেবে কাজ করবে।

জান্নাত ও জাহান্নাম যেমন হবে

সর্বশেষ ঠিকানা হিসেবে মানুষ জান্নাত অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে চিরকালই জান্নাতেই থাকবে। যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তারা সাধারণত চিরকালই জাহান্নামে থাকবে। তবে আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে যাদের মনে বিন্দু পরিমান ও ঈমান ছিল

এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করত তাদেরকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে এক সময় বের করবেন। এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার জান্নাতটি হবে এই পৃথিবীর তুলনায় দশ গুন বড়। জান্নাতীরা নিজ নিজ নাজ নিয়ামত ভোগ করতে থাকবে।

পাশাপাশি জাহান্নামিরা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বিশেষ কুদরতে জান্নাতি ও জাহান্নামে মানুষের অবস্থা সরাসরি একে অপরকে দেখাবেন। সেদিন জাহান্নামীরা আফসোস করবে এবং জান্নাতীরা শুকরিয়া আদায় করবে।

মন্তব্যঃ মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কেমন 

মৃত্যুর পরবর্তীকালীন জীবনে এমন একটা সময় অতিবাহিত হতে থাকবে যা মানুষের কল্পনাতে ও আনতে পারে না। এ জীবনটা চলমান জীবনে সাথে তুলনা করা যায় না। দুনিয়াতে ন্যায় অন্যায়ের দন্ড মানুষ সঠিকভাবে পরিচালনা না করলেও,

সেই কালে মহান আল্লাহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই দন্ড পরিচালনা করবেন।সেখানে রাজত্ব কেবল আল্লারই হবে। কোন মানুষের সাথে কখনো অন্যায় করা হবে না। কারো সাথে বিন্দু পরিমান জুলুম করা হবে না। অন্যায়কারী তার অন্যায় কার্যকলাপের দ্বারা কাওকে গ্রাস করতে পারবে না।

সেখানে পাপীদের জন্য থাকবে তার পাপের কর্মফল এবং নেককারদের জন্য থাকবে তার নিজ কর্মফল। মৃত্যুর পরবর্তী জীবন হলো চরম সত্যের জীবন। এ জীবনে এমন একটা জীবন সেখানে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলা হবে অর্থাৎ ন্যায় বিচারের চরম মানদন্ড প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url