লাইলাতুল ক্বদর এর ইবাদত
লাইলাতুল ক্বদর বা মহিমান্বিত রাত।এই রাতে পবিত্র কুরআন এর সূরা আল-আলাক এর প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল হয়।পবিত্র কুরআনে আল-ক্বদর নামে সূরা রয়েছে।এই রাত হাজার রাতের চেয়েও অধিক উত্তম।এটিকে বলা হয় ভাগ্য নির্ধারণের রাত।
এ রাতের ইবাদত হাজার রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে।তাই এ রাত বিশেষ কিছু ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা যায়।
পেজ সূচিপত্রঃ লাইলাতুল ক্বদরের ইবাদত
- লাইলাতুল ক্বদরের ইবাদত
- লাইলাতুল কদরের ইবাদতের গুরুত্ব
- লাইলাতুল কদরে ইবাদতের ফজিলত
- লাইলাতুল কদরে অতিরিক্ত ইবাদত
- লাইলাতুল কদরের জিকির
- লাইলাতুল কদর এর রাত কোনদিন
- লাইলাতুল কদর চেনার উপায়
- লাইলাতুল কদরের রাতে ক্ষমা
- লাইলাতুল কদরের সহজ ভাবে নামাজ
- মন্তব্যঃ লাইলাতুল ক্বদরের ইবাদত
লাইলাতুল ক্বদরের ইবাদত
লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনী রমজান মাসের কোন দিন সেটি নির্দিষ্ট করে বলা নেই।তবে হাদিস থেকে বোঝা যায় রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাত গুলির যেকোনো একটিতে লাইলাতুল কদর আছে।লাইলাতুল কদরে যে ইবাদত গুলো করা যায় সেগুলো হলো-
- বেশি বেশি দান করা। কেননা দান বালা মুসিবত দূর করে।আল্লাহর রাগ প্রশমিত করে।
- মনোযোগের সাথে শুদ্ধভাবে যতটুকু সম্ভব নফল নামাজ আদায় করা।
- রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
- মনোযোগ সহকারে কুরআন তেলাওয়াত করা।কেউ কুরআন তেলাওয়াত করলে মনোযোগ দিয়ে শোনা।
- লাইলাতুল কদরের রাতে নবী কর্তৃক শেখানো দোয়া পাঠ করা। দোয়া টির বাংলা তর্জমা হলো, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাকারী ও ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন, অতএব আমার গুনাহ মাফ করে দিন।
লাইলাতুল কদরের ইবাদতের গুরুত্ব
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, রমজান মাস! এমন একটি মাছ যে মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে মানবের মুক্তির দিশারী ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন রূপে।সূরা আল-বাকারা,আয়াত ১৮৫। সাধারণত যে কোন মাসে কোন এবাদত করা হলে যেই নেকি পাওয়া যায়,
আরো পড়ুনঃ বাংলা ১২ মাসের নাম ও ক্যালেন্ডার ২০২৫
রমজান মাসে তা ৭০ গুণ থেকে ততধিক হয়।এই মাসের মধ্যেই লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যেই রাতের ইবাদত হাজার বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।সুতরাং এই রাতে ইবাদত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় এবং নেকীর পাল্লা ভারী করতেও সাহায্য করে।
লাইলাতুল কদরে ইবাদতের ফজিলত
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে আল-ক্বদর একটি সূরা নাযিল করেছেন।এবং সেই সূরাতে আল্লাহ বলেন, আমি একে নাযিল করেছি কদরের রাতে।তুমি কি জানো কদরের রাত কি?কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
অর্থাৎ যেকোনো ব্যক্তি এ রাতে নামাজ,দান,কুরআন তেলাওয়াত নামাজ যে কোন ইবাদত করবে তা হাজার রাত বা ততোধিক রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম হবে।কুরআনের এ আয়াত থেকে বোঝা যায় লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে।
লাইলাতুল কদরে অতিরিক্ত ইবাদত
উপরিউক্ত ইবাদত ছাড়াও লাইলাতুল কদরের রাতে অতিরিক্ত কিছু নফল ইবাদত করা যায়।ইবাদত গুলো হলো-
- কেউ যদি মসজিদে ইবাদত করতে চায় তাহলে মসজিদে ঢুকেই দুখুলুল মসজিদের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বেন।
- মাগরিবের পর আউওয়াবিনের নামাজ পড়তে পারেন।এটি দুই রাকাত করে পড়া যায়।
- বেশি বেশি তাওবা করতে হবে।শ্রেষ্ঠ তাওবা বলা হয় সাইয়েদুল ইস্তেগফার কে। প্রয়োজনে তাওবার নামাজ পড়তে পারেন।
- মৃত পরিবার-পরিজন, মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার
এই ইবাদত গুলো লাইলাতুল কদরের অতিরিক্ত ইবাদত হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি করতে পারেন।
লাইলাতুল কদরের জিকির
লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত,এই রাতে ইবাদতের সৌভাগ্য হলে আল্লাহ সেই বান্দার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন।এরাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করার জন্য কিছু জিকির করা যায় সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহু আকবার পড়বেন।
এরপর লা ইলাহা ইল্লাল্লহ পড়বেন।আস্তাগফিরুল্লাহ বেশি বেশি পড়বেন।বেশি বেশি দরুদ পরবেন।সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আযীম বেশি বেশি পড়া।এটি মিযান এর পাল্লা কে ভারী করে।
লাইলাতুল কদর এর রাত কোনদিন
লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই। তবে এ রাতটি রমজান মাসে।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর-বুখারী।রমজান মাসে শেষ দশ দিনের মধ্যে বিজোড় রাত গুলো লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সম্পর্কে বলেন,
তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত গুলো তে কদরের রাত খোজো- বুখারী।আবার ২৭ এ রমজান কদর রজনী হতে পারে। এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক সে যেন তার রমজানের ২৭শে রজনীতে অনুসন্ধান করে-আহমাদ।
লাইলাতুল কদর চেনার উপায়
বেশকিছু হাদিস থেকে লাইলাতুল কদর এর রাত চেনার কিছু আলামত পাওয়া যায়।এই আলামত গুলো থাকলে ধারণা করা যায় সেই রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত।আলামতগুলো হলো-
- সেই রাতটিতে গভীর অন্ধকার থাকবে।
- রাত টি হবে নাতিশীতোষ্ণ।
- সে রাতে এবাদত করে বেশি তৃপ্তি বোধ করবে।
- মুমিনদের স্বপ্ন হলো নবুয়তের ৪৬ ভাগের একভাগ।কাজেই আল্লাহ কোন নেক বান্দাকে স্বপ্নে জানিয়ে দিতে পারেন।
- সে রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
লাইলাতুল কদরের রাতে ক্ষমা
যেহেতু লাইলাতুল কদরের রজনী হাজার রাত ইবাদতের চেয়ে উত্তম তাই এ রাতে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন। কেননা এই রাতে আল্লাহ তাআলা সকল বান্দার মনের ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন এবং সকলের নেক দোয়া কবুল করেন।
আরো পড়ুনঃ ফিলিস্তিন নিয়ে কিছু কথা
কোন পাপী বান্দা যদি এই রাতে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চান তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম হল আল্লাহু গাফফার অর্থাৎ আল্লাহ ক্ষমাশীল।তাই প্রত্যেকের উচিত আল্লাহর কাছে এ রাতে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া।
লাইলাতুল কদরের সহজ ভাবে নামাজ
লাইলাতুল কদরের রাতে একটানা নামাজ পড়া বিরক্তির কারণ হতে পারে। সেজন্য বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে নামাজ পড়া উত্তম। নামাজ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে জিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা ও দরুদ পড়া একঘেয়েমি ভাব দূর করে দিবে।
সম্ভব হলে মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে নিয়ে আবারো নামাজ পড়া উত্তম হবে।কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের নামাজের সময় বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে নামাজ পড়তেন।আর এটিই সুন্নত পদ্ধতি।
মন্তব্যঃ লাইলাতুল ক্বদরের ইবাদত
লাইলাতুল কদর রাতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত।এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে আয়াত নাজিল করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ও এই রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করে গেছেন।এই রাতে ইবাদত যেকোনো বান্দার জন্য সৌভাগ্যের কারণ।
অন্যান্য নবীর উম্মতগণ সারা জীবন যে ইবাদত করে গেছেন উম্মতে মোহাম্মদী এই এক রাতে ইবাদতের মাধ্যমে অন্যান্য সব নবীর উম্মতের সারা জীবনের ইবাদতের চেয়ে বেশি নেকি লাভ করতে পারেন। তাই সকলের উচিত এই রাতকে গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন করা। ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে যাপন করা।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url