ইস্তেখারার নামাজ

মানুষ যখন কোন প্রয়োজন ও সমস্যার সম্মুখীন হয় আর সে চায় যে সেই বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আসুক এবং এটাও চায় যে আল্লাহ তায়ালা যেন তার ইচ্ছা জানিয়ে দেন সে বিষয়টি তার কাছে স্পষ্ট করে দেন তখন ইস্তেখারা নামাজ পড়তে হয়। 

ইস্তেখারার নামাজের মাধ্যমে কোন মানুষ কোন বিষয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে। এবং কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে আল্লাহ সাহায্য পায়। 

পেজ সূচিপত্র:

ইস্তেখারার নামাজ কি

মানুষ যখন কোন সিদ্ধান্তহীনতার সমস্যায় পড়ে অথবা বিশেষ কোনো আর্জি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে আল্লাহর সিদ্ধান্তের আশায় যে নামাজ আদায় করে তাকে ইস্তেখারার নামাজ বলে।জাহেলী যুগের লোকজন কোন কাজের উদ্যোগ গ্রহণ কিংবা সফর,বিবাহ,ক্রয় বিক্রয়  ইত্যাদি সময় তীরের  মাধ্যমে ভাগ্য জেনে নিত। তারা দুইটি তীর টেনে নিক্ষেপ করতো। একটাতে লিখা থাকতো আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন। 

আরেকটা তে লেখা থাকতো আমার প্রভু আমাকে নিষেধ করছেন। তারা ভাগ্য জানতে এই দুই ধরনের তীর এক স্থানে রেখে একটি টেনে বের করত।যদি "আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন" লিখা তীর বের হত তাহলে এটাকে তারা প্রভুর ইচ্ছা ধরে নিত।আর যদি "আমার প্রভু আমাকে নিষেধ করেছেন" তীর বের হতো তাহলে এটাকে প্রভু করতে নিষেধাজ্ঞা মনে করত।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই শিরকি নিয়ম বাতিল করেন এবং ইস্তেখারার নিয়ম চালু করেন।

ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম

ইস্তেখারার নামাজ সাধারণত দুই রাকাত।
  • প্রথমে ইস্তেখারার নামাজের নিয়ত করতে হবে।অনেকে নিয়ত করা আর নিয়ত পড়ার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না।ইচ্ছা পোষণ করাই মূলত নিয়ত করা। তাই এই নামাজ পড়ার জন্য আলাদা করে নিয়ত মুখে পড়ার দরকার নেই।
  • এরপর তাকবীরে তাহরিমা বলে হাত বাধতে হবে।
  • এরপর সানা পাঠ করতে হবে।
  • আউজুবিল্লাহ,বিসমিল্লাহ সহ সূরা আল ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
  • আল ফাতিহার সাথে কুরআনের যেকোনো ৩ টি আয়াত অথবা যে কোন সূরা পাঠ করতে হবে।
  • এরপর যথা নিয়মে রুকু সিজদা করে এক রাকাত শেষ করতে হবে।
  • একইভাবে দ্বিতীয় রাকাতে সিজদাহ শেষ করে তাশাহুদ,দরুদ,ও দোয়া মাসূরা পাঠের পর সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করতে হবে।

মাসআলা

বিয়ে-শাদী, ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করা উচিত। যদি কেউ হজের নিয়ত করে, তাহলে হজ করবে কিনা এ বিষয়ে ইস্তেখারা করা যাবে না। ইস্তেখারা করবে কোন দিন যাবে সেটির উপর।

যদি একদিন ইস্তেখারায় কোন ফলাফল না জানা যায় তবে একদিন,দুইদিন করে সাত দিন পর্যন্ত ইস্তেখারা চালু রাখবে। আল্লাহ চাইলে সাত দিনের মধ্যে ভালো-মন্দ সম্পর্কে অবশ্যই নিদর্শন আসবে।

ইস্তেখারার দোয়া 

দুই রাকাত নামাজের পর মনোযোগের সাথে এই দোয়াটি পড়তে হবে:

হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞান দ্বারা ইস্তেখারা করছি(কল্যানকর দিকটি জানতে চাইছি)।আপনার শক্তি দ্বারা আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি।কেননা আপনি ক্ষমতাবান,আমি অক্ষম।আপনি বিজ্ঞ,আমি অজ্ঞ।আপনি সমস্ত অদৃশ্য ব্যাপারে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।হে মাবুদ!যদি আপনি এ কাজটি আমার জন্য ইহকাল, পরকাল ও পরিণামে কল্যাণকর জানেন,

তাহলে তা আমার ভাগ্যে নির্ধারণ করুন এবং তা আমার জন্য সহজ করে দিন। অতঃপর তাতে বরকত দিন।আর যদি ক্ষতিকর জানেন আমার ইহকাল,পরকাল ও পরিনামে,তাহলে তা হতে আমাকে বিরত রাখুন,তা যেখানেই থাক না কেন।অতঃপর তা দ্বারা আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন। -বুখারী ১:১৫৫, তিরমিযী ১:৯৫

ইস্তেখারার নামাজের মর্যাদা 

কোন মানুষ যখন নিজের ইচ্ছা ও চাহিদা ত্যাগ করে আল্লাহর সামনে নিজেকে সমর্পণ করে দেয় এবং একমাত্র আল্লাহর থেকে আসা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে চায় তখন তার অবস্থা ওই ফেরেশতাদের মত হয় যারা সব সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম লাভের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকে।
 
এ সম্পর্কে হযরত শাহ অলিউল্লাহ বলেন, ইস্তেখারার মধ্যে দুইটি বিষয় আছে। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য এটা একটি পরীক্ষিত উপায় এবং এতে ফেরেশতাদের সঙ্গে সাদৃশ্য অর্জিত হয়। 

ইস্তেখারার শর্ত 

  • ইচ্ছা পোষন করতে হবে। 
  • যে বিষয়ে ইস্তেখারা করা হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল চেষ্টা করতে হবে।
  • ইস্তেখার উপর আল্লাহ যে হুকুম দিবেন সেই হুকুমে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
  • যেকোনো হালাল বা বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হবে।অর্থাৎ যে বিষয়ে শরীয়তে বৈধ নয় সে বিষয়ে ইস্তেখারা করা যাবে না।
  • আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে,যেকোনো হারাম বিষয় ত্যাগ করতে হবে।
  • অবৈধ উপার্জন ও অবৈধ খাবার ত্যাগ করতে হবে।
  • যে বিষয়ে কোন মানুষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অর্থাৎ চাইলেই সে উক্ত বিষয়ের সমাধান নিজেই করতে পারে সেসব বিষয় ইস্তেখারা করা যাবে না। 

ইস্তেখারার উপকারিতা 

ইস্তেখারা করার মাধ্যমে কোন মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।ইস্তেখারার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয় সেটি মঙ্গলজনক হয়।মানুষ যখন কোন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে তখন ইস্তেখারা একটি সুন্নতি পদ্ধতি,যার মাধ্যমে সে নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

ভাগ্য নির্ণয়ের ব্যাপারে মানুষদের শির্ক করে তার বিপরীতে ইস্তেখারা হল বৈধ পদ্ধতি। তাই এর মাধ্যমে শির্ক দূরীভূত হয়।একজন প্রকৃত মুমিনের উচিত কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা করে ইস্তেখারা করা।

যে কারণে ইস্তেখারা করা উচিত 

ইস্তেখারের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া যায়। যখন কোন বান্দা আল্লাহর উপর পুরোপুরি তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তখন সেই বান্দাকে ভালোবাসে। আর ইস্তেখারার মাধ্যমে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা যায়।

ইস্তেখার এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি সঠিকভাবে নিতে পারি।গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিদ্ধান্ত নিতাই ভুগলে সঠিক সিদ্ধান্ত ইস্তেখার মাধ্যমে নেওয়া যায়। তাই আমাদের ইস্তেখারা করা উচিত।

ইস্তেখারার নামাজের নামাজের সময় 

রাতের শেষ ভাগে দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়।যেহেতু ইস্তেখারা নামাজ এর মাধ্যমে এক প্রকার দোয়া করা হয়,তাই এ নামাজ শেষ রাতে পড়া উত্তম।শেষ রাতে আল্লাহ প্রথম আসমানে বিশেষ নজর দেন।বান্দার সকল প্রয়োজন এর কথা ভালোভাবে শোনেন।

এবং বান্দার ইচ্ছা সমূহ পূরণ করেন।নবী (সা) শেষ রাতে নামাজ আদায় করতেন।এবং তিনি শেষ রাতে নামাজ পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই ইস্তেখারার নামাজ রাতের শেষ ভাগে করা উচিত।

মন্তব্যঃ ইস্তেখারার নামাজ

কোন কাজ মানুষের জন্য কল্যাণকর নাকি বিপদজনক এ বিষয়ে আল্লাহর কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়ার একটি মাধ্যম হলো ইস্তেখারার নামাজ।ইস্তেখারার নামাজ নেয়ামত পূর্ন।ইস্তেখারার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ভবিষ্যতে অজানা ফলাফল সম্পর্কে জানতে পারে।এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। 

একজন মুমিনের উচিত আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা।আর ইস্তেখারা তাওয়াক্কুলের পথটি সহজ করে দেয়।আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বিপদে-আপদে ইস্তেখারা করা উচিত। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url